জাতীয় নির্বাচনের স্ট্যান্ডার্ড উপজেলায় আরও ওপরে নিয়ে যেতে চাই: ইসি রাশেদা

নির্বাচন কমিশনার (ইসি) রাশেদা সুলতানা বলেছেন, ‘জাতীয় নির্বাচনে যে স্ট্যান্ডার্ড তৈরি হয়েছে তার নিচে আমরা আর নামতে দিতে চাই না। বরং আরও ওপরে উঠতে চাই। আসছে উপজেলা নির্বাচনে ভোটাররা আসবেন। তাদের ভোটাধিকার নিশ্চিতভাবে প্রয়োগ করবেন। বাইরে গিয়ে যাতে তারা বলতে পারেন, আমার ভোটটা আমি দিয়েছি। এই ভোটের অধিকার নিশ্চিত করাটাই নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব। সেই পরিবেশ তৈরি করার দায়িত্বও কমিশনের।’

মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) দুপুরে রাজশাহী শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ সাধারণ নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

রাশেদা সুলতানা বলেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের মতো এবারের উপজেলা নির্বাচনও অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত করাই নির্বাচন কমিশনের লক্ষ্য। আমাদের জাতীয় ইলেকশন একটা পর্যায়ে চলে গেছে। মানে ভোটারের ভোটাধিকার প্রয়োগ করার যে ক্ষেত্রটা সেটা চলে এসেছে। আমরা চাই আমাদের জাতীয় ইলেকশনে যে একটা স্ট্যান্ডার্ড তৈরি হয়েছে, সেটা ধরে রাখতে।  সেটা থেকে কোনও ক্রমেই নিচে নামতে চাই না, বরং আরও ওপরে উঠতে চাই। আমাদের দেশে যাতে নির্বাচনে একটা পরিবেশ সব সময় তৈরি হয় এবং বিরাজ করে সেটা আমরা (নির্বাচন কমিশন) নিশ্চিত করতে চাই।’

আসন্ন উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়নপত্র অনলাইনে জমা দিতে হবে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশ ডিজিটালাইজেশনে এগিয়ে যাচ্ছে। পুরো বিশ্ব অনেক এগিয়ে গেছে। আমরা অনেকটাই পিছিয়ে আছি। আমরা চাই বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে। কোনও প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিতে গিলে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে। অনলাইনে জমা দিলে তা ঘটবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আগে দুই ভাগে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সুযোগ ছিল। এবার অনলাইনে জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।’

উপজেলা নির্বাচনে বিধিবিধানে পরিবর্তন বিষয়ে রাশেদা সুলতানা বলেন, ‘নির্বাচনে প্রার্থীর জামানতের বিষয়ে পরিবর্তন এসেছে। উপজেলা চেয়ারম্যানের জামানত এক লাখ টাকা। ভাইস চেয়ারম্যানের ৭৫ হাজার টাকা ও নারী ভাইস চেয়ারম্যানের জামানত আগেরটাই রয়েছে। চেয়ারম্যান প্রার্থীর জন্য জামানত দিতে হবে এক লাখ টাকা। অনেকেরই প্রশ্ন এটা বৃদ্ধি কেন করা হলো? ২০-৩০ বছর আগে যেটা প্রচলন ছিল সেটা এখনও বহাল থাকবে, এটা বাস্তবসম্মত না। আমরা কিন্তু বাস্তবতা মেনে এই জামানত বৃদ্ধি করেছি। আমরা আরেকটা বিষয় সংশোধন করেছি, আগে একজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর আড়াইশ জন ভোটারের স্বাক্ষর লাগতো। আমরা এটা সংশোধন করেছি। কারণ, এটা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। একজন ভোটার আগে থেকেই একজনের পক্ষে হয়ে যাবেন, মানুষ জেনে যাবে তিনি তার পক্ষের লোক। এক্ষেত্রে ভোটারের গোপনীয়তা থাকে না, তাই আমরা এটা তুলে ফেলেছি।’

ইভিএম নিয়ে তিনি বলেন, ‘ইভিএম দিয়ে আমরা সবগুলো নির্বাচন করতে পারলে খুশি হতাম। সেই সক্ষমতা আমাদের নেই। এখন যে ইভিএমগুলো ভালো, কাজ করতে সক্ষম সেগুলো দিয়ে নির্বাচন করতে চেয়েছি। রাজশাহী বিভাগের সিরাজগঞ্জ ও পাবনা জেলায় ইভিএম মেশিনের মাধ্যমে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই জেলাগুলোর সব ধাপের ভোট গ্রহণ ইভিএমে হবে। আর বিভাগের বাকি জেলাগুলোর সব ধাপের ভোট গ্রহণ ব্যালট পেপারে অনুষ্ঠিত হবে।’

রাজশাহী আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় আয়োজিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীর। সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি ফয়সাল মাহমুদ, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হেমায়েতুল ইসলাম ও রাজশাহী আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন। অনুষ্ঠানে রাজশাহী বিভাগের সকল জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।