কাভার্ডভ্যান-মাইক্রোবাসের সংঘর্ষে নিহত ৬

একসঙ্গে ৬ লাশ, কান্নার ঈদ স্বজনদের

প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ করতে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে আসছিলেন। পথিমধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় মুহূর্তের মধ্যেই ঈদের আনন্দ বিষাদে রূপ নিলো। তাদের লাশ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছালে নেমে আসে শোকের ছায়া। কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনরা। বৃহস্পতিবার ঈদের দিন এই ছয় জনের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।

বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে নরসিংদীর মাধবদীর টাটাপাড়ার এমএমকে ডাইংয়ের সামনে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে কাভার্ডভ্যান ও মাইক্রোবাসের সংঘর্ষে এই ছয় জন নিহত হন। তারা হলেন—ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরের পাইকপাড়া গ্রামের মজিবুর মিয়া (২২), তার ভাগনি মীম আক্তার (১৭), ভাগিনা আবু হুরায়রা (১০), চাচা জসিম উদ্দিন (২৮), তাদের প্রতিবেশী ফালান মিয়া (২৭) ও হেলাল মিয়া (২৮)। মজিবুর ঢাকার খিলক্ষেতে লেপ-তোশকের ব্যবসা করতেন। ফালান ও হেলালের উত্তরায় পর্দার দোকান ছিল। সবাই একই গ্রামের হওয়ায় ঈদ করতে মাইক্রোবাসে একসঙ্গে বাড়ি আসছিলেন।

পুলিশ ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকা থেকে মাইক্রোবাসে করে তারা ১৩ জন পাইকপাড়া গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতে আসছিলেন। মাধবদীর টাটাপাড়া এলাকার এমএমকে ডাইংয়ের সামনে মাইক্রোবাসটি পৌঁছালে নরসিংদী থেকে ঢাকাগামী প্রিমিয়ার সিমেন্টের কাভার্ডভ্যানের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই আবু হুরায়রা নিহত হয়। আহত অন্যদের উদ্ধার করে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নেওয়ার পথে আরও মারা যান মজিবুর, মীম ও হেলাল। পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর ফালান ও জসিমের মৃত্যু হয়। বৃহস্পতিবার সকালে তাদের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিনা ময়নাতদন্তে লাশগুলো হস্তান্তর করা হয়। জোহরের নামাজের পর জানাজা শেষে পাইকপাড়ার পারিবারিক কবরস্থানে তাদের দাফন করা হয়েছে।

নিহত মজিবুর মিয়া

এর আগে দুপুরে তাদের লাশ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছায়। লাশ দেখে স্ত্রী-সন্তান, ভাই-বোন, স্বজন ও আশপাশের মানুষজন কাঁদতে শুরু করেন। স্বজনদের আহাজারিতে আশপাশের পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। প্রতিবেশীরা বাড়িতে ভিড় জমান। তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার মতো ভাষা খুঁজে পাচ্ছিলেন না প্রতিবেশীরা।

মজিবুরের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, একসঙ্গে পরিবারের চার জনের লাশ দেখে কাঁদছেন মজিবুরের বোন সাথী আক্তার। কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, ‘ভাই বলেছিল, ঢাকা থেকে ফিরে ঈদ করতে আমাকেও শ্বশুরবাড়ি থেকে বাবার বাড়িতে নিয়ে আসবে। এজন্য মীম, আবু হুরায়রা ও চাচাকেও সঙ্গে নিয়ে এসেছিল। সবাই ঠিকই এসেছে, কিন্তু লাশ হয়ে। ঈদের দিনটি আমাদের এমন হবে ভাবতে পারিনি।’

স্বামী জসিমকে হারিয়ে শোকে পাথর হয়ে গেছেন স্ত্রী রত্না আক্তার। কান্না করতে করতে বলেন, ‘রাতে গাড়িতে বসে ফোনে আমাকে বলেছিলেন বাড়ি ফিরছেন, কাছাকাছি আছেন। এর আধা ঘণ্টার মধ্যে দুর্ঘটনার খবর পাই। আমার সবকিছু শেষ হয়ে গেলো। কীভাবে বাঁচবো।’

মীম আক্তার ও তার ভাই আবু হুরায়রা

মীম ও আবু হুরায়রার মা নার্গিস আক্তার অশ্রুনয়নে বলছিলেন, ‘চাঁদরাতে আমার সবকিছু শেষ হয়ে গেলো। আল্লাহ একসঙ্গে দুই সন্তানকে নিয়ে গেলো। কার মুখের দিকে তাকিয়ে আমি বাঁচবো।’

নরসিংদী সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কেএম শহিদুল ইসলাম সোহাগ বলেন, ‘এ নিয়ে ওই দুর্ঘটনায় মাইক্রোবাসের ছয় যাত্রী মারা গেলেন। এ ঘটনায় আহত আরও সাত যাত্রী ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। মাইক্রোবাস ও কাভার্ডভ্যানটি হাইওয়ে থানায় এনে রাখা হয়েছে।’