‘সেফ জোনে’ ২৩ নাবিক, নিরাপত্তায় ইতালির যুদ্ধজাহাজ

সোমালিয়ান জলদস্যুর কবল থেকে এক মাস পর মুক্ত বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিক আগামী ২২ এপ্রিল সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ের আল হারমিয়া বন্দরে পৌঁছাবেন। ইতোমধ্যে ভারত মহাসাগরের অতি জলদস্যু ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা পার করেছেন নাবিকরা। বুধবার (১৭ এপ্রিল) এই এলাকা পার হয়ে গন্তব্যের উদ্দেশে যাচ্ছেন তারা। নিরাপত্তায় রয়েছে ইতালির পতাকাবাহী একটি যুদ্ধজাহাজ। দুবাইয়ের ওই বন্দরে পৌঁছানোর পর জাহাজ থেকে নেমে যাবেন দুই নাবিক। তারা বিমানে দুবাই থেকে দেশে ফিরে আসবেন। বাকি ২১ জন নাবিক জাহাজে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছাবেন।

বাংলা ট্রিবিউনকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন এসআর শিপিংয়ের প্রধান নির্বাহী মেহেরুল করিম। তিনি বলেন, ‘এমভি আবদুল্লাহ জাহাজসহ ২৩ নাবিক বুধবার ভারত মহাসাগরের জলদস্যু ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা অতিক্রম করেছেন। এখন জাহাজটি সেফ জোনে চলে গেছে। যে গতিতে চলছে তাতে জাহাজটি আগামী ২২ এপ্রিল দুবাইয়ের আল হারমিয়া বন্দরে পৌঁছাবে। সেখানে ৫৫ হাজার টন কয়লা খালাস করা হবে।’

এর আগে গত শনিবার (১৩ এপ্রিল) সোমালিয়ান সময় রাত ১২টা এবং বাংলাদেশ সময় রাত ৩টায় এমভি আবদুল্লাহ জাহাজসহ ২৩ নাবিক জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্ত হন। সোমালিয়ান জলদস্যুরা মুক্তিপণ পেয়ে তাদের ছেড়ে দেয়। এরপর জাহাজটি দুবাইয়ের উদ্দেশে রওনা দেয়। দীর্ঘ এক মাস নাবিকরা দস্যুদের কাছে জিম্মি ছিলেন। 

মেহেরুল করিম বলেন, ‘গত ১২ মার্চ দুপুর দেড়টার দিকে ভারত মহাসাগরে জলদস্যুর কবলে পড়ে ২৩ নাবিকসহ এমভি আবদুল্লাহ জাহাজ। ২৩ নাবিকসহ জাহাজটি জিম্মি করার ৯ দিনের মাথায় ২০ মার্চ দুপুরে দস্যুরা যোগাযোগ করে জাহাজ মালিকের সঙ্গে। দস্যুদের পক্ষে ইংরেজি জানা এক লোক যোগাযোগ করেছিল। এরপর দস্যুদের সঙ্গে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ চলতে থাকে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার দস্যুদের সঙ্গে আমাদের চূড়ান্ত সমঝোতা বা চুক্তি হয়। চুক্তিতে তৃতীয় কোনও পক্ষ ছিল না। আমাদের সঙ্গে সরাসরি সমঝোতা হয়েছে। দস্যুদের মুক্তিপণ দেওয়া হয়েছে। তবে কী পরিমাণ এবং কীভাবে মুক্তিপণ দেওয়া হয়েছে, তা জানানো সম্ভব নয়। কারণ জাহাজসহ নাবিকদের ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন দেশের আইন মানা হয়েছে। যা হয়েছে সবই আইন মেনেই করা হয়েছে।’

তবে একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রায় ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিময়ে জাহাজসহ নাবিকদের মুক্তি দিয়েছে সোমালিয়ান জলদস্যুরা।

কেএসআরএমের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার জাহান রাহাত বলেন, ‘মুক্তিপণ হিসেবে কত টাকা এবং কীভাবে দেওয়া হয়েছে, তা সিক্রেট বিষয়। তবে মুক্তিপণ হিসেবে যে ৫ মিলিয়ন ডলার দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে; ওই টাকার অঙ্ক সঠিক নয়। জাহাজসহ নাবিকদের ফিরিয়ে আনতে আমরা যা করেছি, লিগ্যাল উপায়ে করেছি। নাবিকদের সম্পূর্ণ অক্ষত অবস্থায় মুক্ত করতে সক্ষম হয়েছি– এটিই আমাদের বড় পাওয়া।’

কম সময়ে জাহাজটি মুক্ত করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘১৪ বছর আগে এমভি জাহান মণি নামে সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল আমাদের আরও একটি জাহাজ। সেটি দস্যুদের কবল থেকে ছাড়াতে ১০০ দিন সময় লেগে যায়। অতীত অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এবার অল্প সময়ের মধ্যে ২৩ নাবিককে ছাড়িয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। সব নাবিক সুস্থ ও ভালো আছেন।’

এমভি আবদুল্লাহ জাহাজ কবির গ্রুপের এসআর শিপিংয়ের মালিকানাধীন। এসআর শিপিং সূত্র জানায়, জাহাজে প্রায় ৫৫ হাজার মেট্রিক টন কয়লা আছে। গত ৪ মার্চ আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিকের মাপুটো বন্দর থেকে কয়লা নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল জাহাজটি। ১৯ মার্চ সেটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের হামরিয়াহ বন্দরে পৌঁছানোর কথা ছিল। এর মধ্যে ১২ মার্চ দুপুর দেড়টার দিকে ভারত মহাসাগরে জলদস্যুর কবলে পড়ে। ভাড়ার বিনিময়ে মোজাম্বিক থেকে দুবাইয়ের আমদানিকারকের কাছে কয়লা পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব ছিল তাদের।