সাবেক এমপি-মন্ত্রীর ২৪ গাড়ি নিলামে তোলা হচ্ছে

শুল্কমুক্ত সুবিধায় সাবেক সংসদ সদস্যদের আমদানি করা বিলাসবহুল গাড়িগুলো এবার নিলামে বিক্রির প্রক্রিয়া শুরু করেছে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। প্রথম ধাপে নিলামে উঠবে ২৪টি গাড়ি। ইতিমধ্যে প্রক্রিয়া শুরু করেছেন কাস্টমস কর্মকর্তারা। ওই ২৪টি বিলাসবহুল গাড়ির বাজারমূল্য প্রায় ২৮৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৫টি ল্যান্ড ক্রুজার।

সাবেক সংসদ সদস্যদের আমদানি করা অর্ধশত গাড়ির মধ্যে রয়েছে- টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার, টয়োটা জিপ, টয়োটা এলসি স্টেশন ওয়াগট, প্রাডো, বিএমডব্লিউ, মার্সিডিজ বেঞ্জ ও রেঞ্জ রোভারসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের। এসব গাড়ি পড়ে আছে চট্টগ্রাম বন্দরের কার শেড এবং মাল্টিপল শেডে। শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা এসব গাড়ি চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছার আগেই আওয়ামী লীগ সরকারের পতন এবং সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। যে কারণে আমদানিকারকরা পাচ্ছেন না শুল্কমুক্ত সুবিধা।

চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্র জানিয়েছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সদস্যরাই শুল্কমুক্ত সুবিধায় এসব গাড়ি আমদানি করেছিলেন। কিন্তু ছাড় করানোর আগেই ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সংসদ ভেঙে যাওয়ায় এমপিরা এ শুল্কমুক্ত সুবিধার সুযোগ নিতে ব্যর্থ হন। চলতি বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর এ গাড়ির কিছু রাখা হয় চট্টগ্রাম বন্দরের কার শেডে। আর কিছু রয়েছে বন্দরের ভেতর মাল্টিপল শেডে। নিয়ম অনুযায়ী আমদানিকারকরা এসব গাড়ি ৩০ দিনের মধ্যে ছাড় নেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা নেওয়া হয়নি। বর্তমানে এসব গাড়ি ছাড় নিতে হলে ৮৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক পরিশোধ করতে হবে। সে ক্ষেত্রে একেকটি গাড়ির মূল্য ১০ থেকে ১২ কোটি টাকা পর্যন্ত দাম পড়বে। সংসদ সদস্যরা এসব গাড়ি শুধুমাত্র আমদানি মূল্য এক কোটি ৩০ লাখ টাকায় পাওয়ার সুযোগ ছিল।

চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের ডেপুটি কমিশনার মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘৩০ দিনের মধ্যে আমদানিকারক যেসব গাড়ি খালাস নেয়নি, সেগুলোর একটি তালিকা বন্দর কর্তৃপক্ষ থেকে কাস্টমসে পাঠানো হয়েছে। নিলামের অংশ হিসেবে শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করা ২৪ গাড়ির আমদানিকারকের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। প্রতিটি চিঠিতে ১৫ দিনের সময় দিয়ে এসব গাড়ি নির্ধারিত শুল্ক পরিশোধের মাধ্যমে ছাড় নিতে বলা হয়েছে। গত ২২ ও ২৩ অক্টোবর এসব গাড়ির আমদানিকারক বরাবর চিঠি দেওয়া হয়েছে। পনের দিনের মধ্যে কোনও জবাব না পেলে নিয়ম অনুযায়ী দ্বিতীয় চিঠি ইস্যু করা হবে। ওই চিঠির জবাবও ১৫ দিনের মধ্যে না এলে আমরা নিলাম প্রক্রিয়ায় চলে যাবো। তবে বর্তমানে যে চিঠি ইস্যু করা হয়েছে, সেটিও নিলাম প্রক্রিয়ার একটি অংশ।’

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমদানির ৩০ দিনের মধ্যে ছাড় না নেওয়া শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করা ২৪টি গাড়ির নিলাম প্রক্রিয়ায় শুরু করতে কাস্টমস হাউসে চিঠি পাঠানো হয়েছে।’

প্রথম ধাপে নিলামের প্রক্রিয়া শুরু হওয়া গাড়িগুলোর মধ্যে রয়েছে- সাবেক সংসদ সদস্য তারানা হালিম, ময়মনসিংহের আব্দুল ওয়াহেদ, জামালপুরের আবুল কালাম আজাদ, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের এস এম আল মামুন, বাঁশখালীর মুজিবুর রহমান, খুলনার এস এম কামাল হোসেন, নওগাঁর সুরেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী, গাইবান্ধার শাহ সরোয়ার কবির, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এস এ কে একরামুজ্জামান, নেত্রকোনার সাজ্জাদুল হাসান, ঝিনাইদহের নাসের শাহরিয়ার জাহেদী, যশোরের তৌহিদুজ্জামান ও সুনামগঞ্জের মুহাম্মদ সাদিক অন্যতম। তবে সরকার পতনের আগে জুলাই মাসে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ও ব্যারিস্টার সুমনসহ সাত এমপি তাদের গাড়ি ছাড়িয়ে নেন।

বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিকলস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বারভিডা) সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সংসদ সদস্যরা প্রতি মেয়াদে একবার করে শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি আমদানির সুযোগ পেয়ে থাকেন। এসব গাড়ি আমদানি থেকে ছাড় নেওয়া পর্যন্ত জাতীয় সংসদের স্পিকারের দুটি চিঠির প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে প্রথম চিঠিটা প্রয়োজন হয় এলসি খোলার জন্য। দ্বিতীয় চিঠিটি আমদানি করা গাড়ি শুল্কমুক্ত সুবিধায় ছাড় নেওয়ার জন্য।’

এ ব্যবসায়ী নেতা আরও বলেন, ‘বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে সাবেক সংসদ সদস্যদের যেসব গাড়ি আটকে আছে, সেগুলো জন্য তারা স্পিকারের প্রথম চিঠিটা এনেছিলেন। তবে এগুলো চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছার আগে বা পরে সরকার পতন এবং সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। এসব গাড়ি শুল্কমুক্ত সুবিধায় ছাড় নেওয়ার জন্য স্পিকারের দ্বিতীয় চিঠিটা সংসদ বিলুপ্ত হওয়ায় তারা আনতে পারেননি। এ কারণে গাড়িগুলো আটকে গেছে। এ কারণে শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা গাড়ি আর শুল্কমুক্তভাবে মিলছে না। বন্দর থেকে নির্দিষ্ট সময়ে ছাড় না নেওয়ায় এসব গাড়ি বর্তমানে রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করার পাশাপাশি নিলাম প্রক্রিয়া শুরু করতে যাচ্ছে কাস্টমস।’