জাহাজে ৭ খুন: একাই হত্যা করেছেন বলে জবানবন্দি দিলেন আকাশ

চাঁদপুরের হাইমচরে মেঘনা নদীর ইশানবালা খালের মুখে সারবাহী এমভি আল-বাখেরা জাহাজে সাত জনকে হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার আকাশ মণ্ডল ওরফে ইরফান (২৬) আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। পাশাপাশি রিমান্ডে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

সাত দিনের রিমান্ড শেষে মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) দুপুর ২টায় চাঁদপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোরশেদুল আলমের আদালতে আকাশ মণ্ডলকে হাজির করা হয়। এরপর প্রায় পাঁচ ঘণ্টাব্যাপী আকাশ মণ্ডল জবানবন্দি দেন। জবানবন্দি গ্রহণ শেষে সন্ধ্যা ৭টায় কারাগারে পাঠানো হয়। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জাহাজের মধ্যে একাই সাত জনকে কুপিয়ে হত্যা করেছেন বলে জানান আকাশ।

এর আগে নৌ-পুলিশ আকাশকে সঙ্গে করে ঘটনাস্থল মেঘনা নদীর মাঝেরচর এলাকা, চাঁদপুর শহর ও বাগেরহাটে নিয়ে যায়। এসব জায়গায় গিয়ে তারা খুনের ঘটনায় আকাশের সরেজমিন বিবরণ নেন, ঘটনার আলামতসহ নানা বিষয়ে নিশ্চিত হন। বিশেষ করে কীভাবে একা এত বড় সারবোঝাই জাহাজটি তিনি চালালেন, সেটি তারা আকাশকে দিয়ে জাহাজ চালিয়ে নিশ্চিত হন।

চাঁদপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) কোহিনুর বেগম এসব তথ্য বাংলা ট্রিবিউনকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘জাহাজে সাত খুনের ঘটনা চাঞ্চল্যকর এবং সারা দেশে আলোচিত। জবানবন্দি ও রিমান্ডে আকাশ মণ্ডলের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। তিনি এ ঘটনার প্রধান হোতা হিসেবে ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। আমরা আশা করছি, খুব দ্রুতই এর বিচারকাজ শুরু হয়ে দ্রুতই শেষ হবে।’

গত ২৫ ডিসেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও চাঁদপুর নৌ-পুলিশের পরিদর্শক মো. কালাম খান আসামিকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। শুনানি শেষে হাইমচর আমলি আদালত-৫-এর বিচারক জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ ফারহান সাদিক সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

আকাশ মণ্ডল বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার মূলঘর গ্রামের জগদীশ মণ্ডলের ছেলে। ২৪ ডিসেম্বর রাতে র‍্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখা, র‍্যাব-১১ ও ৬-এর যৌথ অভিযানে বাগেরহাটের চিতলমারী এলাকার এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে ওই জাহাজের লস্কর আকাশ মণ্ডলকে গ্রেফতার করা হয়। পরদিন বুধবার দুপুরে কুমিল্লা নগরের শাকতলা এলাকায় র‍্যাব-১১-এর সিপিসি-২ কুমিল্লা কার্যালয়ে ব্রিফিং করে ঘটনার বিস্তারি তুলে ধরে র‍্যাব। ওই দিন বিকালে চাঁদপুরে নৌ-পুলিশের কাছে তাকে হস্তান্তর করা হয়।

র‍্যাবের ভাষ্যমতে, জাহাজে সাত খুনের ঘটনায় আকাশ মণ্ডল ‘একমাত্র’ খুনি। নিয়মিত বেতন-ভাতা ও ছুটি না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি প্রথমে জাহাজের মাস্টারকে খাবারের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে হত্যা করেন। জাহাজের অন্য ব্যক্তিরা জীবিত থাকলে সহজে ধরা পড়ে যাবেন ভেবে বাকি সবাইকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। কিন্তু তাদের মধ্যে একজন বেঁচে যান।

চাঁদপুর নৌ-পুলিশের সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বলেছেন, জাহাজে হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পর বেঁচে থাকা জুয়েলের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আকাশ মণ্ডলের গতিবিধি নজরদারি করছিলেন তারা। তাকে ধরতে মঙ্গলবার সারারাত অভিযান চালায় নৌ পুলিশ ও জেলা পুলিশ। ভোরে বাগেরহাটের চিতলমারী এলাকা থেকে গ্রেফতার করে র‍্যাব। বিকালে চাঁদপুরে এনে নৌ-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। আমাদের ধারণা ছিল, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। ঘটনাটি কোনও ডাকাতি ছিল না। কারণ যেভাবে কক্ষে কক্ষে রেখে হত্যা করা হয়, সেটি ডাকাতির প্রমাণ করে না। এ বিষয়ে বিস্তারিত তদন্ত চলছে।’

প্রসঙ্গত, গত ২৩ ডিসেম্বর বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে এমভি আল-বাখেরা জাহাজ থেকে পাঁচ জনের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। আর তিন জনকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় জাহাজের মালিক মাহবুব মোর্শেদ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে চাঁদপুরের হাইমচর থানায় একটি মামলা করেছেন।