গাজীপুরে ইমাম হত্যা: চট্টগ্রামে সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রেফতার ২১, নতুন কর্মসূচি ঘোষণা

ইসলামী ছাত্রসেনার সাবেক নেতা, মসজিদের ইমাম মাওলানা রইস উদ্দিনের হত্যাকারীদের গ্রেফতার দাবিতে চট্টগ্রাম নগরীতে অবরোধ কর্মসূচি পালনকালে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় ২১ জনকে গ্রেফতার করেছে পাঁচলাইশ ও চান্দগাঁও থানা পুলিশ। এরমধ্যে পাঁচলাইশ থানা পুলিশ ১২ জন এবং চান্দগাঁও থানা পুলিশ ৯ জনকে গ্রেফতার করেছে। এ ঘটনায় দুটি থানায় দায়ের করা হয়েছে পৃথক মামলাও।

গ্রেফতাররা ইসলামী ছাত্রসেনা, ইসলামী ফ্রন্ট ও আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত এর সদস্য বলে জানিয়েছে পুলিশ। সংঘর্ষে পাঁচলাইশ থানার ওসি মোহাম্মদ সোলাইমানসহ পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।

সোমবার (৫ মে) সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত নগরীর মুরাদপুর ও বহদ্দারহাট এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানিয়েছে, নগরীর গুরুত্বপূর্ণ বহদ্দারহাট-মুরাদপুর সড়ক সকাল ৯টা থেকে মাওলানা রইস উদ্দিনের হত্যাকারীদের গ্রেফতার দাবিতে অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন ইসলামী ছাত্রসেনার নেতাকর্মীরা। অবরোধের কারণে সড়কের দুই পাশে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। মুরাদপুর ও বহদ্দারহাট মোড়ে সড়কের ওপর টায়ার জ্বালিয়ে এবং ইট-পাথর ফেলে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে রাখা হয়। পরে পুলিশ অবরোধকারীদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পরে মুরাদপুর এলাকায় সেনাবাহিনীর সদস্যরাও যুক্ত হন। তখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ধাওয়ায় ছত্রভঙ্গ হয়ে যান অবরোধকারীরা। এ সময় পুলিশ টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড এবং গ্যাসশেল নিক্ষেপ করে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে।

পুলিশ জানিয়েছে, সকালে অবরোধ কর্মসূচি ও বিক্ষোভ সমাবেশের নামে হাতে কাঠ ও বাঁশের লাঠি, ইট-পাথর নিয়ে একটি মিছিল থানাধীন মুরাদপুর মোড়ে জড়ো হয়ে নাশকতা সৃষ্টি করে বিভিন্ন স্থাপনা ও গণপরিবহন ভাঙচুর করে।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) আমীরুল ইসলাম বলেন, ‘আন্দোলনকারীদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করলে তারা পুলিশের উপর চড়াও হয়। দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের সরকারি দায়িত্ব পালনে বাধা প্রদান করে। আন্দোলনকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি ইট-পাথর ছুড়ে মারে। দুষ্কৃতকারীদের ইট-পাথরের আঘাতে পাঁচলাইশ মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ সোলাইমান, এএসআই মুসলিম উদ্দিন, কনস্টেবল মো. আশরাফ উদ্দিন, কনস্টেবল মো. রফিকুল ইসলাম ও কনস্টেবল মো. আবু শাকিল আহত হন।’

কর্মসূচি ঘোষণা

মাওলানা রইস উদ্দিনের হত্যাকারীদের গ্রেফতার দাবি এবং অবরোধ পালনকারীদের ওপর হামলা করা হয়েছে দাবি করে সোমবার বিকাল ৪টায় চট্টগ্রাম নগরের চেরাগী পাহাড় শাহ আনিস মসজিদ মার্কেটে দলীয় কার্যালয়ে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনা যৌথ সংবাদ সম্মেলন করে। এতে নতুন কর্মসূচির ঘোষণা দেন ইসলামী ছাত্রসেনার কেন্দ্রীয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সাহেদুল আলম।

তিনি বলেন, ‘আমাদের শান্তিপূর্ণ সড়ক অবরোধে পুলিশি ও সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে মঙ্গলবার (৬ মে) সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হবে। প্রতিটি জেলা ও মহানগরে রাজপথে নামবে ছাত্রসেনা। বিকাল ৩টায় ঢাকা ও চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে কালোপতাকা মিছিল অনুষ্ঠিত হবে।’

প্রসঙ্গত, গাজীপুর মহানগরীর পূবাইলের হায়দরাবাদ আখলাছ জামে মসজিদের খতিব ও ইমাম মাওলানা রইস উদ্দিনকে ‘মব’ সৃষ্টি করে গত ২৭ এপ্রিল গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতনের পর পুলিশের কাছে সোপর্দ করে স্থানীয়রা। পুলিশ তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়। ওই রাতেই তার মৃত্যু হয়।