নারায়ণগঞ্জের বন্দরে আধিপত্য বিস্তার ও অটোরিকশা স্ট্যান্ড দখল নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে আব্দুল কুদ্দুস নিহতের ঘটনায় সাবেক কাউন্সিলর বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা হান্নান সরকারসহ চার জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বুধবার (২৫ জুন) দুপুরে গাজীপুর থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতাররা হলেন- বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মো. হান্নান সরকার, তার দুই ছেলে জুনায়েদ ও ফারদিন এবং সহযোগী বাবু শিকদার।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত (ওসি) লিয়াকত আলী বলেন, ‘আব্দুল কুদ্দুস নিহতের ঘটনায় হত্যা মামলা হয়েছে। ওই মামলায় সাবেক কাউন্সিলর হান্নান সরকারসহ চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা সবাই কুদ্দুস হত্যা মামলার আসামি। এ ছাড়া একই ঘটনায় মেহেদী হাসান নিহতের ঘটনায় মামলা হয়েছে। দুটি মামলায় ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’
এর আগে ২১ জুন রাতে আড়াই ঘণ্টার ব্যবধানে বন্দর উপজেলার শাহী মসজিদ ও সিরাজউদ্দৌলা এলাকায় অটোরিকশা স্ট্যান্ড দখল নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের বিরোধের জেরে মেহেদী হাসান (৩৮) ও আব্দুল কুদ্দুসকে (৬০) পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। আব্দুল কুদ্দুস বন্দরের হাফেজিবাগ এলাকার মৃত সাদেক আলীর ছেলে ও বিএনপির রনি-জাফর গ্রুপের সমর্থক। মেহেদী হাসান শাহী মসজিদ এলাকার জলিল মুন্সির ছেলে ও বন্দর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। তিনি বাবু-মেহেদী গ্রুপের সদস্য।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বন্দর রেললাইন এলাকায় অটোরিকশা স্ট্যান্ড দখল ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গত কয়েক দিন ধরে সিটি করপোরেশনের ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল কাওসার আশার অনুসারী রনি-জাফর গ্রুপের সঙ্গে ২১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও মহানগর বিএনপির নেতা হান্নান সরকারের অনুসারী বাবু-মেহেদীর বিরোধ চলছিল। এ নিয়ে গত শুক্রবার দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত আট জন আহত হন। সেই বিরোধের জের ধরে শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে বাবু-মেহেদী গ্রুপের লোকজন রনি-জাফর গ্রুপের সমর্থক আব্দুল কুদ্দুসকে কুপিয়ে হত্যা করেন। খবর পেয়ে নিহতের স্বজন ও রনি-জাফর গ্রুপের লোকজন রেললাইন সংলগ্ন এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। রাত সাড়ে ১১টার দিকে বন্দরের সিরাজউদ্দৌলা ক্লাব মাঠ দিয়ে মেহেদী যাওয়ার পথে গণপিটুনি দিয়ে ছুরিকাঘাত করা হয়। স্থানীয়রা তাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে শহরের খানপুর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। দিনমজুর আব্দুল কুদ্দুস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তার মেয়ে রোকসানা বেগম বাদী হয়ে ২১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও বিএনপি নেতা হান্নান সরকারসহ ১৩ জনকে এজাহারনামীয় এবং আরও ২০ থেকে ৩০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা করেন।
অপরদিকে মেহেদী হাসান হত্যার ঘটনায় তার ভাই খালেদ সাইফুল্লাহ বাদী হয়ে ২৯ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৩০ থেকে ৪০ জনকে আসামি করে মামলা করেন। এই মামলায় আসামিদের তালিকায় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর শাহীন মিয়ার নাম রয়েছে।