ত্রিপুরা শিক্ষার্থীকে ধর্ষণচেষ্টা, সব পদ থেকে  যুবদল নেতাকে বহিষ্কার

চট্টগ্রামে মীরসরাইয়ে নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া (১৫) ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। রবিবার (১২ মে) বিকালে উপজেলার একটি ইউনিয়নে এই ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত যুবকের নাম আবুল কাশেম (৩৮)।

সোমবার (১২ মে) বিকাল ওই শিক্ষার্থীর মা বাদী হয়ে জোরারগঞ্জ থানায় আবুল কাশেমকে আসামি করে একটি মামলা করেছেন। ওই কিশোরী স্থানীয় একটি উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী।

আবুল কাশেম উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নের মৃত আব্দুল কাদেরের ছেলে। স্থানীয়রা জানান, অভিযুক্ত কাশেম করেরহাট ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য পদে রয়েছে। এই ঘটনার পর তাকে দলের সব পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

ভুক্তভোগীর মা ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রবিবার বিকাল ৫টার দিকে নবম শ্রেণি পড়ুয়া ওই কিশোরী প্রাইভেট পড়ে ঘরে এসে রান্নার কাজ করছিল। তখন আবুল কাশেম বাড়ির উঠোনে এসে ওই কিশোরীর কাছে পানি চায়। পানি দেওয়ার পর অভিযুক্ত ঘরে ঢুকে পড়ে। এ সময় কিশোরীকে কুপ্রস্তাব দেয়। এতে রাজি না হওয়ায় কাশেম জবরদস্তি করে ও মুখ চেপে ধরে। এক পর্যায়ে কিশোরী ছুটে ঘরের বাইরে চলে আসে। তার চিৎকারে আশপাশে থাকা ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর লোকজন ছুটে এলে আবুল কাশেম মোটরসাইকেলযোগে ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়ে।

এই ঘটনার পর সন্ধ্যায় কিশোরীর বাবা-মা ও স্থানীয়রা জোরারগঞ্জ থানায় অভিযোগ দিতে যাওয়ার পথে কয়লা বাজার এলাকায় স্থানীয় একদল লোক তাদের থানায় যেতে বাধা দেয় এবং আগামী বৃহস্পতিবার এই ঘটনার বিচার করে দেবে বলে আশ্বাস দেয়।

ভুক্তভোগীর মা বলেন, রবিবার বিকালে আমি ও আমার স্বামী বাইরে কাজে থাকার সুযোগ নিয়ে আমাদের বসতঘরে ঢুকে আবুল কাশেম মেয়ের ওপর অত্যাচার করে। এই ঘটনায় থানায় অভিযোগ করতে বের হলে সন্ধ্যায় কয়লা বাজারে কিছু লোক আমাদের বাধা দিয়ে পরে স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করে দেবে বলে থানায় যেতে দেয়নি। সোমবার বিকালে জোরারগঞ্জ থানায় গিয়ে এ ঘটনায় আবুল কাশেমকে আসামি করে মামলা করেছি।

অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে আবুল কাশেম দাবি করে, আমি ওই কিশোরীর বাবার কাছে টাকা পাই। সেই টাকা উদ্ধার করতে তার বাড়িতে গেলে মেয়েটির বাবার সঙ্গে আমার বাগবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে আমি তাদের বাড়ির উঠান থেকে চলে আসি। ঘরে ঢুকে কিশোরীকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ সত্য নয়। স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার ইন্ধনে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।

এদিকে সোমবার বিকালে অভিযুক্ত আবুল কাশেমকে প্রাথমিক সদস্য পদসহ দল থেকে বহিষ্কার করে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে যুবদল জোরারগঞ্জ থানা শাখা। জোরারগঞ্জ থানার আহবায়ক সিরাজুল ইসলাম ও সদস্য সচিব দেলোয়ার হোসেন।

তাদের স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ‘সংগঠনের শৃঙ্খলা বিরোধী কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত থাকার সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে জোরারগঞ্জ থানার আওতাধীন ১নং করেরহাট ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আবুল কাশেমকে প্রাথমিক সদস্য পদসহ দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কৃত নেতার কোনও ধরনের অপকর্মের দায়-দায়িত্ব দল নেবে না। যুবদলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের তার সঙ্গে সাংগঠনিক সম্পর্ক না রাখার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে’

এ বিষয়ে জোরারগঞ্জ থানার ওসি সাব্বির মোহাম্মদ সেলিম বলেন, নবম শ্রেণি পড়ুয়া এক ত্রিপুরা কিশোরীকে ধর্ষণ চেষ্টা করার বিষয়ে জেনে রবিবার রাতেই সেখানে পুলিশের একটি পরিদর্শন টিম পাঠিয়েছি। প্রাথমিকভাবে ওই ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। সোমবার বিকালে ওই কিশোরীর মা বাদী হয়ে আবুল কাশেমকে আসামী করে থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে তা মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়। অভিযুক্ত আবুল কাশেমকে গ্রেফতারের জন্য অভিযান অব্যাহত আছে।