টেকনাফে জেলের লাশ গুমের অভিযোগ, কোস্টগার্ড বলছে ‘মিথ্যা’ 

কক্সবাজারের টেকনাফের স্থানীয় এক জেলেকে গুলি করে হত্যার পর লাশ গুমের অভিযোগে বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছে নিহত ব্যক্তির স্বজন ও স্থানীয়রা। মঙ্গলবার (২০ মে) দুপুরে  বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও টেকনাফের সর্বস্তরের জনগণ-এর ব্যানারে টেকনাফ পৌরসভাস্থল ঝরনা চত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময়  ‘আমার ভাই মরছে কেন প্রশাসনের জবাব চাই- স্লোগানে স্থানীয় লোকজন সমাবেশে অংশ নেয়। তবে কোস্টগার্ড বলছে, লাশ গুমের এমন অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট।

বিক্ষোভকারীরা দাবি করেন, মোহাম্মদ তাহের (৪০) নামের ওই জেলেকে কোস্টগার্ড সদস্যরা গুলি করে হত্যার পর লাশ গুম করেছে। জেলে মোহাম্মদ তাহের টেকনাফ সদর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের নতুন পল্লানপাড়ার বাসিন্দা। তিনি টেকনাফ সদর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড নতুন পল্লানপাড়া এলাকার আব্দুল জলিলের ছেলে। তিনি নৌকার মাঝি ও মালিক ছিলেন। রফিকা বেগম ও মোহাম্মদ তাহের দম্পতির ২ ছেলে ও ৫ মেয়েসন্তান রয়েছে।

বিক্ষোভ সমাবেশে তাহেরের বড় ভাই মোহাম্মদ কাশিম বলেন, ‘সোমবার (১৯ মে) রাতে তাহেরসহ সাত জন জেলে মাছ ধরতে গেলে কোস্টগার্ডের গুলিতে তাহের ঘটনাস্থলেই মারা যান। পরে লাশটি প্যাকেটে ভরে অটোরিকশায় শাহপরীর দ্বীপের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। আমরা লাশ বুঝে পাইনি।’

সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের প্রতিনিধি মোরশেদ আলম, আতাউল্লাহ ইয়াসিন আরাফাত, জুবায়ের আজিজ, সাইফুল ইকবাল, মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, আতাউল্লাহ, নিহতের পরিবারের গুলবাহার বেগম, বড় ভাই মো. কাশিম ও মেয়ে আছিয়া বেগম।

সমাবেশে ছাত্রনেতারা আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিহতের লাশ ফেরত চেয়েছেন। পাশাপাশি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে বিচার বিভাগীয় তদন্তেরর দাবি করেছেন এবং অন্যথায় টেকনাফ অচল করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীদের নাটকমূলক বিভিন্ন অভিযান বন্ধের দাবি তোলেন তারা।

নিখোঁজ জেলেকে ফেরত চান স্বজনরা

সমাবেশে জানানো হয়, তাহেরের লাশ ফেরত পেতে আইনি সহযোগিতা চেয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন স্বজনরা।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার ভূমি রাকিব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘টেকনাফে একটি বিক্ষোভ সমাবেশ করা হয়েছে। যাতে সাধারণ মানুষের কষ্ট না হয় সেদিকে নজর রাখা হয়েছে। এ ছাড়া নিখোঁজ তাহেরের পরিবারের পক্ষে আমরা একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এটি খতিয়ে দেখা হবে। পাশাপাশি এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।’

অভিযোগ মিথ্যা: কোস্টগার্ড

কোস্টগার্ডের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সোমবার রাত আড়াইটার দিকে টেকনাফের তুলাতলী ঘাট এলাকায় অভিযান চালিয়ে কোস্টগার্ড বাহিনীর সদস্যরা ইঞ্জিনচালিত একটি কাঠের নৌকা থেকে ১টি বিদেশি পিস্তল, ৪টি গুলি, ৩০ হাজার ইয়াবা বড়িসহ তিন জনকে আটক করা হয়েছে। তারা হলেন উখিয়ার কুতুপালং আশ্রয়শিবিরের বাসিন্দা মো. ইলিয়াস (৩০), নুর মোহাম্মদ (৬১) ও আবদুল শুক্কুর (৪০)। তাঁদের মধ্যে আবদুল শুক্কুর গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তাঁকে চিকিৎসার জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কোস্টগার্ড মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার হারুন-অর-রশীদ বলেন, ‘জেলের লাশ গুমের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। এ ধরনের কোনও ঘটনাই ঘটেনি। আমরা মাদকবিরোধী অভিযানে গেলে ঘটনাস্থল থেকে গুলিবিদ্ধ একজনসহ তিন জনকে অস্ত্র-মাদক নিয়ে আটক করেছি। তিন জনই অপরাধী। তাদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ ব্যক্তিকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। মূলত মাদকবিরোধী অভিযানকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে বাহিনীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।’

টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক রিয়াদ সাঈদ চৌধুরি বলেন, ‘সোমবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে গুলিবিদ্ধ শুক্কুরকে কোস্টগার্ড সদস্যরা হাসপাতালে নিয়ে আসেন। তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পিঠে গুলিবিদ্ধ শুক্কুরের অবস্থা আশঙ্কাজনক।’