প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে এবার প্রায় ১৪ হাজার কেজি ডিম সংগ্রহ হয়েছে। নদীর পাড়ের প্রায় ৫৫০ জন ডিম সংগ্রহকারী প্রায় ২৫০টি নৌকা নিয়ে এসব ডিম সংগ্রহ করছে। শুক্রবার (৩০ মে) রাতে বিশিষ্ট হালদা নদী গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বৃহস্পতিবার রাত ২টা থেকে বহুল প্রতীক্ষিত হালদা নদীতে রুই জাতীয় ব্রুড মাছ ডিম ছেড়েছে। হালদা নদীর মদুনাঘাট ছায়ার চর থেকে, রামদাস মুন্সিরহাট, আমতুয়া, নাপিতার গোনা, আজিমের ঘাট, মাচুয়া গোনা, কাগতিয়া, আইডিএফ হ্যাচারি, সিপাহী ঘাট, নোয়াহাট, কেরামতালির বাক ও অঙ্কুরিগোনা পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকা থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ ডিম সংগ্রহ করা হয়েছে। অনেকে প্রতি নৌকায় গড়ে ৫ থেকে ৬ বালতি পর্যন্ত ডিম সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছে। এখন নদীর পাড়ে স্থাপিত সরকারি ও বেসরকারি হ্যাচারি এবং ট্র্যাডিশনাল মাটির কুয়াগুলোতে ডিম সংগ্রহকারীরা ডিমের পরিস্ফুটনে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছে।
তিনি বলেন, নদীতে মৎস্য অধিদফতর, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, নৌ পুলিশ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরি যৌথভাবে ডিম সংগ্রহের তথ্য সংগ্রহ ও নদীর সার্বিক পরিবেশ মনিটরিং করছে। চলতি বছর ডিম ছাড়ার আরও সময় রয়েছে।
এর আগে ২০২৩ সালে ১৪ হাজার ৬৬৪ কেজি ও ২০২৪ সালে এক হাজার ৬৮০ কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়।
বৃহস্পতিবার (২৯ মে) রাত ২টার পর থেকে নদীতে ডিম মিলতে শুরু করে। এর আগে থেকে নৌকা নিয়ে হালদায় অবস্থান করছিলেন ডিম সংগ্রহকারীরা। ডিম সংগ্রহকে ঘিরে হালদা নদীতে উৎসবের আমেজ বইছে।
এ প্রসঙ্গে রাউজান উপজেলার জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রাত ২টা থেকে হালদা নদীতে মা মাছ ডিম ছেড়েছে। রাতভর ডিম সংগ্রহ চলে। সকালেও নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে ডিম সংগ্রহ করা হয়।’
রাউজান উপজেলার প্রবীণ ডিম সংগ্রহকারী কামাল উদ্দিন সওদাগর বলেন, ‘রাত ২টা থেকে নদীতে ডিম ছাড়ে মা মাছ। তবে বৃষ্টি ও আবহাওয়া উত্তপ্ত এবং নদীতে পানি বেশি থাকায় অনেক ডিম স্রোতে চলে গেছে। এরপরও প্রতিটি নৌকা ডিম সংগ্রহ করতে পেরেছে। আমরা ডিম সংগ্রহের জন্য গত বুধবার সকাল থেকে নৌকা নিয়ে হালদায় অপেক্ষায় আছি, কখন ডিম ছাড়বে।’
সংশ্লিষ্টরা জানান, এপ্রিল থেকে জুন মাস পর্যন্ত হালদা নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়ার উপযুক্ত সময়। মৌসুমের অমাবস্যা ও পূর্ণিমা তিথিতে বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হলে নদীতে পানি বাড়ে। আর এতে মা মাছ ডিম ছাড়ে।
রুই জাতীয় মাছের মৎস্য প্রজননকেন্দ্র হিসেবে খ্যাত হালদা নদীকে বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ হিসেবে ঘোষণা করে গেলো আওয়ামী লীগ সরকার। ২০২০ সালের ২২ ডিসেম্বর এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।