এবার পুলিশ সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের ঘোষণা

চট্টগ্রামের পটিয়া থানার ওসিকে প্রত্যাহারের পর এবার পুলিশের সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের নেতাকর্মীরা। বৃহস্পতিবার (০৩ জুলাই) বিকাল ৩টায় ষোলশহরে তিন সংগঠনের আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ আন্দোলনের ঘোষণা দেন এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সংগঠক জুবাইর হাসান। একই দাবিতে সন্ধ্যা ৬টায় নগরের ষোলশহর থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করার কথা জানিয়েছেন তিনি।

পটিয়ায় ছাত্রলীগ কর্মীকে গ্রেফতার, সড়ক অবরোধ ও ওসির অপসারণের দাবিসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সংগঠক ইমন সৈয়দ, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের (বাগছাস) কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব নিজাম উদ্দিন, যুগ্ম সদস্যসচিব ইবনে হোসাইন জিয়াদ, মুখ্য সংগঠক তাওসিফ ইমরোজ প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, পুলিশের মধ্যে চলমান অনিয়ম, ক্ষমতার অপব্যবহার, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও জনভোগান্তি দূর করতে দ্রুত সংস্কার প্রয়োজন। গতকাল ওসি জায়েদ নূরকে অপসারণ না করে রেঞ্জ অফিসে সংযুক্ত করা হয়েছে। এটি তো আমাদের দাবি ছিল না। আমাদের দাবি ছিল তাকে স্থায়ীভাবে অপসারণ করে বিচারের আওতায় আনা। অবিলম্বে তাকে অপসারণ ও পুলিশ সংস্কার করতে হবে।

খান তালাত মাহমুদ রাফি বলেন, ‌‘আমরা দেখেছি বিগত ১৫ বছর যারা হাসিনার আমলে ওসি হয়েছেন, তারা হাসিনার গোলাম ছিলেন। তাদের বর্তমানে দায়িত্বে থাকার প্রয়োজনীয়তা মনে করি না। বরং তাদের বরখাস্ত করে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। পুলিশকে মাথা থেকে পা পর্যন্ত সংস্কার করতে হবে। এজন্য দ্রুত সময়ের মধ্যে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে হবে। পটিয়ায় এখনও আমাদের অনেক আহত ভাই হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি এদেশে আবারও জুলাই নেমে আসবে। বীর চট্টলা আবার ঐক্যবদ্ধ হবে। বাংলাদেশ আবারও ঐক্যবদ্ধ হবে। ৫ আগস্টের মতো বাংলাদেশের মানুষ আবারও রাজপথে নেমে আসবে। তারা পুলিশের সংস্কার চাইবে। যে মা তার সন্তান হারিয়েছে, সে মা তার সন্তান হত্যার বিচার চাইবে।’

রাফি বলেন, ‘আমরা আজকে ষোলশহর থেকে পুলিশ সংস্কার আন্দোলনের ঘোষণা করছি। কর্তৃপক্ষ যতক্ষণ পুলিশ সংস্কার কাজ শুরু করবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।’

এর আগে গত মঙ্গলবার রাত ৯টায় পটিয়ার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে থেকে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের এক কর্মীকে আটক করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। থানায় নিয়ে গেলে তার বিরুদ্ধে মামলা না থাকায় পুলিশ গ্রেফতার দেখায়নি। এ নিয়ে পুলিশ ও নেতাকর্মীদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়। পরে রাতেই দুই পক্ষের মধ্যে দুই দফা সংঘর্ষ হয়। এতে দুই পক্ষের ১৯ জন আহত হয়েছেন বলে দাবি করে উভয় পক্ষ। তবে বৈষম্যবিরোধীরা বলছেন, তাদের নেতাকর্মীদের ওপর লাঠিপেটা করেছে পুলিশ।

এ ঘটনার জের ধরে বুধবার সকালে পটিয়া থানা ঘেরাও ও ‘পটিয়া ব্লকেড’ কর্মসূচির ডাক দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সংগঠনের নেতাকর্মীরা সকাল ৯টা থেকেই থানা ঘেরাও শুরু করেন। পরে খণ্ড খণ্ড মিছিলে এসে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক অবরোধ করেন। প্রায় ৯ ঘণ্টা পর সড়ক ছাড়েন তারা। একই দাবিতে উপমহাপুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি) কার্যালয়ের সামনের নগরের জাকির হোসেন সড়ক তিন ঘণ্টা অবরোধ করেন নেতাকর্মীরা। তাদের আন্দোলনের মুখে বুধবার রাতেই পটিয়া থানার ওসিকে প্রত্যাহার করা হয়।