ক্যানসারে আক্রান্ত ফুটবলার ঋতুপর্ণার মা, টাকার অভাবে থমকে আছে চিকিৎসা

বাংলাদেশের নারী ফুটবল দলের নৈপুণ্যে এশিয়া কাপে খেলার সুযোগ তৈরি হয়েছে। যেখানে অসামান্য অবদান রেখেছেন রাঙামাটির পাহাড়ি কন্যা ঋতুপর্ণা চাকমা। দেশের হয়ে একের পর এক সাফল্য এনে দিচ্ছেন, ঠিক তখনই তার মা ভূজোপতি চাকমা লড়ছেন ক্যানসারের সঙ্গে। চিকিৎসা করার মতো আর্থিক সামর্থ্য নেই পরিবারের। চিকিৎসা থমকে আছে টাকার অভাবে। পরিবারের পক্ষ থেকে চাইলেন সরকারি সহায়তা।

পাহাড়ি উজ্জ্বল ঝরণা ঋতুপর্ণা চাকমা। বেদনার অতল সাগর বুকে চেপে দেশের তরে ছুটছেন। ৭৩ ধাপ এগিয়ে থাকা মিয়ানমারকে পরাজিত করে বাংলাদেশ। যার দৃষ্টি নন্দন দুটি গোলই করেছেন পাহাড়ের এই কন্যা। পাহাড়ে গিরিখাত আর দুর্গম পথ পেরিয়ে ঋতুপর্ণার লড়াইয়ে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। মাঠের বাইরে ঋতুপর্ণার চলছে এক কঠিন লড়াই। দেড় বছর ধরে মা ভুগছেন কঠিন ক্যানসারে।

পেশাগত আয় দিয়ে মূলত তিনি তার পরিবারের খরচ চালান। তিন বোনের মধ্যে দুই জনের বিয়ে হয়েছে। ২০১৫ সালে লিভার ক্যানসারে মৃত্যু হয় বাবার। একমাত্র ভাই তিন বছর আগে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছেন। দেড় বছর ধরে মা ক্যানসারে আক্রান্ত। তার চিকিৎসা চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে গোটা পরিবারকে।

সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ের পর ঋতুপর্ণাসহ পাহাড়ের নারী ফুটবলারদের নিয়ে রাষ্ট্রীয় ও প্রশাসনিক মহলে ব্যাপক উৎসাহ দেখা গেলেও বাস্তবায়ন হয়নি কোনও প্রতিশ্রুতি। ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল নতুন ঘর নির্মাণ, এলাকায় রাস্তা উন্নয়নের। কিন্তু সে প্রতিশ্রুতির বাস্তবচিত্র আজও অনুপস্থিত।

ঋতুপর্ণার বড় বোন পাম্পী চাকমা বলেন, ঋতুপর্ণা দেশের জন্য খেলতেছে আমার চাই ও আরও ভালো খেলুক। ও দেশের জন্য অনেক সুনাম বয়ে আনলেও পরিবারের অবস্থা অনেক খারাপ। প্রতি মাসে মায়ের চিকিৎসা জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন, সেটা জোগাড় করা কঠিন আমাদের জন্য। ও যা খেলে পায় তা দিয়ে মায়ের চিকিৎসা করাতে হচ্ছে। সরকারের কাছে আমাদের আবেদন মায়ের চিকিৎসা, ঋতুপর্ণার নিরাপদ আবাসন ও বোনদের কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হোক।

ঋতুপর্ণার মা ভূজোপতি চাকমা বলেন, খেলা শেষে প্রতিবার ফোন করে সে। আমরাও বাংলাদেশের খেলা থাকলে সবাই একসঙ্গে দেখি। স্বপ্ন দেখি একদিন আমার মেয়ে বিশ্বকাপের মঞ্চে খেলবে। এলাকাবাসীয় ওর জন্য দোয়া করে। মেয়ের নিয়মিত বেতন হচ্ছে না। ফলে চিকিৎসা করতে কষ্ট হচ্ছে। কষ্টের মধ্যে মেয়ের সাফল্যে খুশি এই জননী।

পরিবারের এই পরিস্থিতিতে ঋতুপর্ণার এমন সাফল্যেও গর্বিত এলাকাবাসী। এলাকাবাসীও চাইলেন ঋতুর মায়ের চিকিৎসার জন্য সরকারি সহায়তা।

রাঙামাটির জেলা প্রশাসক হাবিব উল্লাহ জানান, বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জেনেছি। ঋতুপর্ণার পাশে জেলা প্রশাসন সবসময় ছিল। ওর বাড়ির জন্য জায়গা ও বাড়ি নির্মাণে সহযোগিতা করছে। ওর মায়ের চিকিৎসার জন্য সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।

উল্লেখ্য, এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বে ম্যাচে স্বাগতিক মিয়ানমারকে ২-১ গোলে এবং তুর্কমেনিস্তানকে ৭-০ গোলে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ। এই দুই দলের বিপক্ষে জোড়া গোল করে দেশের জন্য গৌরব বয়ে এনেছেন ঋতুপর্ণা চাকমা। একদিকে তার এই সাফল্য যেমন দেশকে গর্বিত করেছে।

এশিয়া কাপে খেলার সুযোগের পাশাপাশি এবার হাতছানি দিচ্ছে নারী বিশ্বকাপ। ২ জুলাই মিয়ানমারের থুউন্না স্টেডিয়ামে ঋতুপর্ণার জোড়া গোলে ২০২৬ সালে এশিয়া কাপ নিশ্চিত হয়েছে। আর এশিয়া কাপের নির্বাচিত ১২ দলের মধ্যে ৮ দলই খেলার সুযোগ পাবে বিশ্বকাপে। যেখানে এগিয়ে রাখা যায় ঋতু-রুপনাদের।