জঙ্গিবাদবিরোধী মিছিলে নূর হোসেনের মুক্তি দাবি!

নারায়ণগঞ্জে জঙ্গিবাদ বিরোধী একটি মিছিলে, আলোচিত সাত খুন মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনের মুক্তি দাবি করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সোমবার বিকালে সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মোড়ে ৪নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের উদ্যোগে জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাস বিরোধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে ওই সমাবেশে বিভিন্ন এলাকা থেকে নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে যোগ দেয়।

নূর হোসেনের সৌজন্যে জঙ্গিবাদবিরোধী মিছিল

সিটি করপোরেশনের ৩নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ব্যানারে বের হওয়া মিছিলে ৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহজালাল বাদলের নেতৃত্বে নূর হোসেনের কয়েক শ’ কর্মী-সমর্থক অংশগ্রহণ করে। মিছিল থেকে নূর হোসেনের মুক্তি দাবি করে স্লোগান দেওয়া হয়।

মিছিলে নূর হোসনের সৌজন্যে লেখা অনেকগুলো ব্যানার ও ফেস্টুন দেখা গেছে। আর ছবিগুলোতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও এমপি শামীম ওসমানসহ স্থানীয় নেতাদের ছবি ছিল।

পরে সিদ্ধিরগঞ্জের হাউজিং-এর হাজী ফজুলল হক মডেল হাই স্কুল মাঠে নাসিক ৪ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের উদ্যোগে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবিরোধী সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় শ্রমিক লীগের সাবেক সভাপতি আব্দুল মতিন মাস্টার, নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি চন্দন শীল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ নিজাম, সাংগঠনিক সম্পাদক জাকিরুল আলম হেলাল, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইয়াছিন মিয়া, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা শ্রমিক লীগের সভাপতি আব্দুস সামাদ ব্যাপারী, নাসিক ৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক শাহজালাল বাদল ও ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আরিফুল হক হাছান প্রমুখ।

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম ও অ্যাডভোকেট চন্দন সরকারসহ ৭ জনকে অপহরণ করা হয়। পরে ৩০ এপ্রিল ও ১ মে তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলায় তদন্তকারী সংস্থা ডিবি নূর হোসেনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট প্রদান করে। নূর হোসেন শুরু থেকে পলাতক থাকলেও গত বছরের জুনে তিনি কলকাতা পুলিশের অভিযানে গ্রেফতার হয়।

১১ নভেম্বর ভারত থেকে তাকে বাংলাদেশে আনা হয়। এর মধ্যে মামলার চার্জশিট হওয়ায় তাকে ওই দুটি মামলায় নিয়মিত আদালতে হাজির করা হচ্ছে। সোমবারও সাত খুনের দুটি মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া নূর হোসেন আগে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ছিলেন। সাত খুনের পর মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি নূর হোসেনকে কমিটি থেকে অব্যাহতি প্রদানে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কাছে সুপারিশ করেন।

সাত খুনের পর নূর হোসেন ভারতে পালানোর বিষয়ে এমপি শামীম ওসমানের সঙ্গে একটি টেলিফোন কথোপকথন প্রকাশ পায়। যদিও শামীম ওসমান ওই ব্যাপারে সংবাদ সম্মেলন করে তার ব্যাখা দিয়েছিলেন।

শামীম ওসমান সহ আওয়ামী লীগের নেতারাও নূর হোসেনের শাস্তি দাবি করেন। যদিও সাত খুনের ঘটনায় নূর হোসেনের পক্ষে আদালতে মামলা লড়ছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সেক্রেটারী খোকন সাহা, আড়াইহাজার আওয়ামী লীগের সেক্রেটারী এম এ রশিদ ভূঁইয়াসহ আওয়ামী লীগের প্রভাবশালীরা। মামলাটির এখনও নিষ্পত্তি হয়নি। কিন্তু নূর হোসেনের বিরুদ্ধে এর আগে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসহ বিভিন্ন অভিযোগ ছিল। মাদক ব্যবসা থেকে শুরু করে বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে এ ব্যক্তির বিরুদ্ধে।

সাত খুনের মত আলোচিত একটি মামলায় যেখানে তদন্তকারী সংস্থা প্রধান আসামি হিসেবে অভিযুক্ত করেছে সেখানে মামলার রায়ের আগে নূর হোসেনের পক্ষে এ ধরনের শো ডাউন নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কারণ একজন দুর্ধর্ষ ব্যক্তির ছবি সম্বলিত ব্যানার পোস্টারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও এমপি শামীম ওসমান সহ স্থানীয় নেতাদের জুড়ে দেওয়া হয়েছে।

/এইচকে/

আরও পড়ুন: নারায়ণগঞ্জে শামীম-আইভি দ্বৈরথ, চলছে বিএনপির প্রস্তুতি