হেমায়েত উদ্দিন বীরবিক্রমের মরদেহ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন

শোকাবহ পরিবেশে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক হেমায়েত বাহিনীর প্রধান হেমায়েত উদ্দিন বীরবিক্রমের মরদেহ রাষ্ট্রিয় মর্যাদায় দাফন করা হয়েছে।

হেমায়েত উদ্দিনের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছে এলাকাবাসী

সোমবার বিকালে হেমায়েত উদ্দিনের শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী, নিজ গ্রাম গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার টুপরিয়া গ্রামে হেমায়েত বাহিনীর মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি জাদুঘর প্রাঙ্গনে তার মরদেহ সমাহিত করা হয়। সেনাবাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রদান করে। পরে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে তার কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এর আগে সেখানে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর পুলিশের পক্ষ থেকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।

দুপুর ১ টার দিকে, হেমায়েত উদ্দিনের মরদেহ হেলিকপ্টারে করে টুপরিয়া গ্রামে আনা হয়। বিকালে  হেমায়েত উদ্দিনের মরদেহ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য হেমায়েত বাহিনীর স্মৃতি জাদুঘর প্রাঙ্গনে রাখা হয়। গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোখলেসুর রহমানসহ প্রশাসনের পদস্থ কর্মকর্তা, মুক্তিযোদ্ধা, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শ্রমজীবি, পেশাজীবি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং এলাকার সর্বস্তরের মানুষ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

হেমায়েত উদ্দিন বীরবিক্রমের ছেলে মিলন জানান, ১৯৪১ সালের ৩ ডিসেম্বর গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার টুপুরিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন হেমায়েত উদ্দিন। তার বাবার নাম শেখ আব্দুল করিম ও মায়ের নাম সখিনা বেগম।

শনিবার সকাল ৬টা ১০ মিনিটে ঢাকা ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালে হেমায়েত উদ্দিন বীরবিক্রম মারা যান। তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর।

হেমায়েত উদ্দিনের জানাজা

হেমায়েতের ভাই মুক্তিযোদ্ধা সামসুল হক জানান, হেমায়েত উদ্দিন বীরবিক্রম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে ব্যান্ডপার্টির হাবিলদার পদে চাকরি করতেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ হেমায়েত উদ্দিন ঢাকার গাজীপুর সেনানিবাস থেকে অস্ত্রসহ কয়েকজন বিদ্রোহী সৈন্য নিয়ে গোপালগঞ্জে চলে আসেন। ২৮ এপ্রিল  তিনি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার রিমামেরকান্দি গ্রামে আসেন। পরে নিজ গ্রাম  টুপুরিয়া এসে তিনি হেমায়েত বাহিনী গঠন করেন। মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি পর্বে তিনি কোটালীপাড়া থানায় আক্রমণ করে প্রচুর অস্ত্র ও গোলাবারুদ সংগ্রহ করেন। কোটালীপাড়ার জহরের কান্দিতে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ ক্যাম্প স্থাপন করেন। হেমায়েত বাহিনীতে সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ছিল পাঁচ হাজার ৫৫৮ জন। এ বাহিনী ৪২টি দলে বিভক্ত হয়ে বরিশাল ও ফরিদপুর অঞ্চলে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নেয়। রামশীলের যুদ্ধে হেমায়েত বাহিনী ব্যাপক সাফল্য লাভ করেছিল। ওই যুদ্ধে ১৫২ জন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হন এবং হেমায়েত বাহিনীর একজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। মারাত্মক আহত হন হেমায়েত উদ্দিন। ৩ ডিসেম্বর হেমায়েত বাহিনী কোটালীপাড়া ও টুঙ্গিপাড়া থেকে শত্রুবাহিনীকে বিতারিত করে ওই দুই উপজেলাকে মুক্ত করেন।

মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ হেমায়েত উদ্দিনকে বীরবিক্রম খেতাবে ভূষিত করা হয়। বর্তমান সরকারের উদ্যোগে মহান মুক্তিযুদ্ধে হেমায়েত বাহিনীর গৌরবময় স্মৃতি ধরে রাখতে কোটালীপাড়ার টুপুরিয়া গ্রামে ‘হেমায়েত বাহিনীর মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি জাদুঘর’ নির্মাণ করা হয়। ২০১৩ সালের ১২ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাদুঘরটি উদ্বোধন করেন। ওই জাদুঘর প্রাঙ্গনেই সমাহিত করা হয় হেমায়েত উদ্দিনকে। 

/এসএ/