লিবিয়ায় নির্যাতনে মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগে নারায়ণগঞ্জে গ্রেফতার ২

অপরাধী চক্রের দুই সন্দেহভাজনকে আটক করে পুলিশভালো বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে লিবিয়াতে পাচারের পর সেখানে আটকে রেখে নির্যাতন করে বাংলাদেশে থাকা পরিবারের কাছ থেকে টাকা হাতানো চক্রের দুই সন্দেহভাজন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এক ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগের পর নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ ওই দু’জনকে গ্রেফতার করে। পুলিশ বলছে, চক্রটি ইতোমধ্যে ৩০ থেকে ৩২ লাখ টাকা বিভিন্নজনের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ৫ লাখ টাকা।

বৃহস্পতিবার দুপুরে মিজানুর রহমান নামের এক ভুক্তভোগী ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা দায়ের করলে পুলিশ দুই সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করে। পুলিশ জানায়, মিজানুর রহমানের ছেলে ও তাদের পাশের বাড়ির এক লোককে লিবিয়ায় আটকে নির্যাতন করে মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার করা সন্দেহভাজনরা হলো – জামালপুর জেলার মেলান্দহ থানার মালঞ্চ এলাকার আবদুল জলিলের ছেলে হযরত আলী (৩৮) ও ফতুল্লার পাগলা হাই স্কুল সংলগ্ন দেলোয়ার হোসেনের ছেলে সাইফুল ইসলাম (২২)। মামলায় এ দু’জন ছাড়াও তাদের সহযোগী পলাতক জামালপুরের মালঞ্চ এলাকার আবদুল জলিলের ছেলে হারুন (৩৫) ও ফতুল্লার পাগলা এলাকার দেলোয়ার হোসেনের ছেলে দুলাল হোসেনকে (২৮) আসামি করা হয়েছে। দুই পলাতক আসামি এখন লিবিয়ায় অবস্থান করছে বলে জানা গেছে।

মামলার বাদী নরসিংদি জেলার বেলাবো চরলক্ষ্মীপুর এলাকার তোতা মিয়ার ছেলে মিজানুর রহমান জানান, তার ছেলে মেহেদী হাসান হৃদয় ও প্রতিবেশী সেলিমকে ভালো চাকুরীর প্রলোভন দেখিয়ে ৬ মাস আগে লিবিয়া পাঠায় এজাহারভুক্ত চার আসামি।

এজাহারে ঘটনার বিবরণ থেকে জানা যায়, গত ৫ এপ্রিল দুলাল নিজেই মিজানুরকে ফোন করে জানায়, মেহেদী ও সেলিম তার হেফাজতে আছে। তাদের মুক্তি চাইলে জনপ্রতি ৫০ হাজার করে টাকা দিতে হবে। মিজানুর রহমান লিবিয়াতে ফোন করে মেহেদীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে জানতে পারেন, তাকে ও সেলিমকে হারুন ও দুলাল আটকে রেখে শারীরিক নির্যাতন করছে। ফোনে সেই নির্যাতনের শব্দও শোনানো হতো। দুলালের কথামতো গত ২২ এপ্রিল মিজানুর রহমান ফতুল্লার পাগলায় এসে সাইফুলকে নগদ ৩০ হাজার দেন। কিন্তু সেদিন রাতে আরও ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করে সাইফুল। কিন্তু মিজানুর রহমান অপরাগতা প্রকাশ করলে লিবিয়ায় মেহেদী ও সেলিমকে আরও মারধর করা হয়।

এ সম্পর্কে ফতুল্লা থানা মামলা করা হলে গত ২৬ এপ্রিল ফতুল্লার পাগলা থেকে সাইফুলকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ জানায়, সাইফুল তার ভাই দুলাল ও হারুন লিবিয়ায় বাংলাদেশি নাগরিকদের অন্যায়ভাবে আটক রেখে মারধর করে আত্মীয়দের কাছ থেকে অন্তত ৩০ থেকে ৩২ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার কথা স্বীকার করেছে। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে সাইফুল ও হযরত আলীর বাড়ি থেকে পাঁচ লাখ টাকা উদ্ধার করে।

ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামালউদ্দিন দু’জনকে গ্রেফতারের কথা নিশ্চিত করেছেন। তিনি আরও জানান, ‘অপরাধী চক্রের অপর সদস্যদেরও গ্রেফতারে অভিযান চলছে।’

/এসএ/