পদ্মা সেতু: নদী শাসনে লাগবে ১ কোটি ৩৩ লাখ ব্লক

পদ্ম সেতুর নদী শাসনের কাজে তৈরি করা ব্লক (ছবি: মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি)পদ্মা সেতুর মূল কাজের পাশাপাশি নদী শাসনের কাজও দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। আর এ জন্য প্রয়োজন পড়বে কমপক্ষে ১ কোটি ৩৩ লাখ কংক্রিট ব্লক। এরইমধ্যে প্রায় ৩৫ লাখ ব্লক তৈরি হয়েছে। আরও ১ কোটি ব্লক তৈরি করতে হবে। এখন পর্যন্ত নদী শাসনের মোট কাজ হয়েছে ৩৪ ভাগের বেশি। নদী শাসনের কাজে যুক্ত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সূত্রে এই তথ্য পাওয়া গেছে।

সেতু প্রকল্প এলাকা সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ব্লক তৈরি করে নদীর তীরবর্তী এলাকায় সারিবদ্ধভাবে সাজিয়ে রাখা আছে। নদী শাসনের দুইটি অংশ। একটি মাওয়া প্রান্তে, অন্যটি জাজিরা প্রান্তে। যেহেতু মাওয়া প্রান্তে সেতু নির্মাণকাজে সহায়তাকারী চীনা প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রোর অফিস আছে এবং সেতু তৈরির মালামাল রাখা আছে তাই এখানে নদী শাসনের কাজ পরে হবে। পদ্মা সেতু প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী এ খবর নিশ্চিত করেছেন।পদ্ম সেতুর নদী শাসনের কাজে তৈরি করা ব্লক (ছবি: মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি)

কর্মকর্তারা্ জানান, নদী শাসনের প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো নদী ভাঙন রোধ করে মূল সেতু রক্ষা করা। নদী ভাঙন রোধ করা না গেলে ভাঙনপ্রবণ এলাকায় নদী তার গতিপথ পরিবর্তন করে নতুন নদী সৃষ্টি করবে। এতে দেখা যাবে সেতু থাকবে এক জায়গায়, নদী থাকবে আরেক জায়গায়। তাই নদী শাসন করে এক স্থানেই নদীর অবস্থান ধরে রাখতে হবে।

পদ্মা সেতু প্রকল্পের ওয়েবসাইটে প্রয়োজনীয় ব্লকের সংখ্যা ১ কোটি ৩৩ লাখ উল্লেখ করা হয়েছে। এই পর্যন্ত তৈরি হয়েছে মোট ৩৫ লাখ ব্লক। যেহেতু মাওয়ায় এখন কাজ নেই, তাই তৈরি ব্লকগুলো নদীর পাড়ে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। মাওয়ায় যখন কাজ করা হবে তখন এই ব্লক মাওয়াপ্রান্তের নদীতে ফেলা হবে। জাজিরাপ্রান্তেও ব্লক তৈরি করে নদীর পাড়ে রাখা হয়েছে।

প্রকৌশলীরা জানান, নদীর গতিপথ বিবেচনা করে ধারণা করা যায়, আগামী পাঁচ/সাত বছর পরে কাঠালবাড়ীর দিকে নদী ভাঙন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সেই ভাঙন যাতে না হয় তাই ৮০ মিটার গভীরতা পর্যন্ত ড্রেজিং করে তার নিচে বালুর বস্তা দেওয়া হয়েছে। এই বস্তাগুলো ১৭০ মিটার দীর্ঘ ও ওজনে প্রায় ২৫ মণ। নদীর স্রোতে যেন বস্তাগুলো স্থানচ্যুত না হয় বরং ভাঙনের সময় যেন ঠিক জায়গায় থেকে নদীর তলদেশে বসে যায় সেজন্যই এগুলো এভাবে তৈরি করা।পদ্ম সেতুর নদী শাসনের কাজে তৈরি করা ব্লক (ছবি: মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি)

সেতুর জাজিরাপ্রান্তে পাচ্চর থেকে মাঝিকান্দি পর্যন্ত নদী শাসনের কাজ হয়েছে। আর মাওয়াপ্রান্তে পুরনো  ফেরিঘাট থেকে শুরু করে কন্সট্রাকশন ইয়ার্ড পর্যন্ত নদীতে বালির বস্তা ফেলা হয়েছে। তবে এই বছর নয়, সামনের বছর এই প্রান্তে নদী শাসনের মূল কাজ করা হবে। কারণ, এখানে প্রায় ১০ মিটার চওড়া চর পড়েছে। এদিকে পুরনো ফেরিঘাটের উজানে দেড় কিলোমিটার এলাকা নদী শাসন করা হয়েছে। আর আরও উজানে যেহেতু প্রকল্পের অধিগ্রহণ করার জায়গা নেই তাই সেখানে নদী শাসন করবে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড।

প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, প্রথমে নদীর তলদেশ ড্রেজিং করে বড় আকারের বালির বস্তা ফেলে তার ওপর পাথর ফেলা হবে। এরপর জিও ব্যাগ ফেলে ঢালাই করে তার ওপর সিসি ব্লক বিছিয়ে নদী শাসনের কাজ সম্পূর্ণ করা হবে। তবে মূল সেতুর কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার পর একটি  শুকনো মৌসুমে নদী শাসনের বাকি কাজ সম্পূর্ণ করতে হবে।