পাকিস্তানি বাহিনী রাজবাড়ীতে প্রবেশের পর বিহারিদের সঙ্গে যোগসাজোশে নির্বিচারে জ্বালাও-পোড়াও ও গণহত্যা চালাতে থাকে। ১৯৭১ সালের ২১ এপ্রিল হানাদার বাহিনী প্রথম রাজবাড়ীর গোয়ালন্দঘাটে প্রতিরোধের মুখে পড়ে। এদিন পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে ফকির মহিউদ্দিন শহীদ হন। সেদিন সকালে বালিয়া ডাঙ্গা গ্রামে ২৫ জনকে হত্যা করে পাকিস্থানিরা। এভাবে ৯ সেখানে হানাদার বাহিনীর ধ্বংসযজ্ঞ চলে। তবে ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জণ হলেও রাজবাড়ী তখনও হানাদার বাহিনীর দোসর বিহারিদের হাতে অবরুদ্ধ ছিল ।অবশেষে ১৮ ডিসেম্বর বিকালে রাজবাড়ী মুক্ত করা হয়। উত্তোলিত হয় স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা।
মুক্তিযোদ্ধা আহম্মদ নিজাম মন্টু বলেন, ‘১৪-১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজবাড়ীতে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে বিহারিদের তুমুল যুদ্ধ হয়। পরে ১৮ ডিসেম্বর বিকালে রাজবাড়ী শত্রুমুক্ত হয়।’
মুক্তিযোদ্ধা এসএম নওয়াব আলী বলেন, ‘১৯৭১ সালে ছাত্র জীবনেই বঙ্গবন্ধুর নির্দেশেই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। তৎকালীন গোয়ালন্দ সাব ডিবিশনের হাইকমান্ড জনাব জিল্লুল হাকিম কমান্ডার ও আব্দুল মালেকের অধীনে যুদ্ধ করি। ‘৭১ সালে রাজবাড়ী বিহারিদের দখলে ছিল। তখন যশোরের আকবর বাহিনী, পাংশার জিল্লুর হাকিমের বাহিনী অন্যান্য জায়গা থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের বাহিনী সম্মিলিতভাবে যুদ্ধ করে রাজবাড়ী শত্রুমুক্ত করা হয়।’
জেলা সদরের খানখানাপুর এলাকার মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম লাল জানান, ‘স্বাধীনতা যুদ্ধ বাঙালির অস্তিত্বের যুদ্ধ ছিল। তখন আমরা কলেজে পড়ি। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ শুনে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নেই এভাবে বসে থাকলে চলবে না যুদ্ধ করতে হবে। এরপর কয়েকজন বন্ধু রাজবাড়ী থেকে পায়ে হেঁটে ইন্ডিয়া গেলাম। কাজী হেদায়েত হোসেন কল্যাণীতে ক্যাম্প করেছিলেন। সেখানে ১৫ দিন থাকার পর দেরাদুনে ট্রেনিংয়ে গেলাম। সেখানে আমাদেরকে আমর্স ও অনান্য ট্রেনিং দেওয়া হয়। ট্রেনিং শেষে কলকাতা নিয়ে আসা হয় আমাদের। কলকাতার ব্যারাকপুর থেকে আমাদেরকে অস্ত্র দেওয়া হলো। দেশে ঢুকে রাজবাড়ীর সব মুক্তিযোদ্ধারা এক হই। আমাদের লিডার ছিলেন সিরাজ ভাই। তার নেতৃত্বে আমরা রাজবাড়ীতে যুদ্ধ করি।’
মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবুল হোসেন বলেন, ‘রাজবাড়ীতে ১৫-২০ হাজার বিহারিদের বাস ছিল। তারা হানাদার বাহিনীর সঙ্গে গ্রামগঞ্জ থেকে যুবকদেরকে ধরে এনে হত্যা করতো, কূপের মধ্যে ফেলো দিতো। বিহারিদের সঙ্গে যুদ্ধ করেই রাজবাড়ী শত্রুমুক্ত করা হয়েছিল।’