নারায়ণগঞ্জে ৬টি মন্দিরের ১২টি প্রতিমা ভাঙচুর

প্রতিমানারায়ণগঞ্জ বন্দর উপজেলার লাঙ্গলবন্দে (ব্রক্ষপুত্র নদের তীরে অবস্থিত) ৬টি মন্দিরের ১২টি প্রতিমা ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) ও রবিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাতে এই ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ মহানগর পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও লাঙ্গলবন্দ স্নান উদযাপন কমিটির সদ্য শিখন সরকার শিপন বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন র্যা ব ও পুলিশের ঊধর্বতন কর্মকর্তারা। এদিকে এই ঘটনায় ওই এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, ১৬ ডিসেম্বর দুপুরে পূজারিরা পূজা শেষ করে মন্দির বন্ধ করে চলে যায়। ওই দিনই বিকাল চারটার দিকে এসে মন্দিরে এসে দেখেন শ্রী শ্রী রক্ষাকালি মন্দিরের অভ্যন্তরে কালি মায়ের প্রতিমা ভাঙা অবস্থায় পড়ে আছে। এবং ঘটনাস্থলে থেকে ৫০ গজ দূরে আরেকটি বিগ্রহ মন্দিরে মূর্তির কিছু অংশ পোড়া দেখতে পান। ১৮ ডিসেম্বর সকাল ছয়টার সময় পূজা করার জন্য হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন গিয়ে দেখে কাল ভৈরব মন্দির, শীতলা মায়ের মন্দির, জয়কালি মন্দির, ও শিব পার্বতী মঠ মন্দিরসহ ছয়টি মন্দিরে থাকা প্রতিমার অংশ বিষেশ ভাঙা। পরে প্রতিমা ভাঙচুর অবস্থা দেখে পূজা উদযাপন কমিটির লোকজন বিষয়টি জানায়। পূজা উদযাপন পরিষদের নেতারা সরেজমিন পরিদর্শন করে ঘটনার সত্যতা পায়। অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা এই ঘটনা ঘটিয়েছে বলে মামলা এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
প্রতিমা1স্থানীয় হিন্দু তপন চন্দ্র দাস ও দীলিপ চক্রবর্তী জানান, গত শনিবার বিকালে ও রবিবার রাতে কে বা কারাওইসব মন্দিরের ১২টি প্রতিমা ভেঙে ফেলে। একটি মন্দির ঘরে প্রতিমায় আগুন দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। গত দু’দিনে দুর্বৃত্তরা তাদের মন্দিরগুলোতে হামলা চালিয়ে প্রতিমাগুলোতে ভাংচুর করেছে।
তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, দীর্ঘদিন ধরে এই লাঙ্গলবন্দ এলাকায় হিন্দু মুসলাম সম্প্রদায়ের লোকজন মিলে মিশে বসবাস করে আসছে। কিন্তু কোরও ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। এবারই প্রথম এমন ঘটনা ঘটলো। তারা অবিলম্বের প্রশাসরে কাছে প্রতিমা ভাঙচুরকারিদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানান।
জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি শংকর সাহা জানান, লাঙ্গলবন্দে গত দু’দিনে বহ্মপুত্র নদে ৬টি মন্দিরে এই হামলা চালানো হয়েছে। দুষ্কৃতিকারীরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার জন্য পাঁয়তারা চালাচ্ছে। গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এই হামলা চালানো হতে পারে।
এদিকে প্রতিমা ভাঙচুরের খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাজিদুর রহমান, বন্দর থানার ওসি আবুল কালাম আজাদসহ পুলিশ ও র্যা বের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
প্রতিমা2বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) আবুল কালাম বলেন, ‘দুর্বৃত্তদের হামলায় ৬টি মন্দির ঘরের প্রতিমা ভাঙচুর হয়েছে। এই ঘটনায় মহানগর পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও লাঙ্গলবন্দ স্নান উদযাপন কমিটির সদ্য শিখন সরকার বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’
এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার মঈনুল হক বলেন, ‘প্রতিমা ভাঙার বিষয়টি পুলিশ খতিয়ে দেখছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি বিনষ্টসহ স্থানীয় কোনও দ্বন্দ্ব আছে কিনা এসব বিষয় মাথায় রেখে পুলিশ তদন্ত করছে। ওই এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।’