গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীর ভাটিয়াপাড়া শত্রুমুক্ত হয় আজ

picআজ ১৯ ডিসেম্বর গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীর ভাটিয়াপাড়া শত্রুমুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিন পাকিস্তানি বাহিনীর দখলে থাকা কাশিয়ানী উপজেলার ভাটিয়াপাড়া ওয়্যারলেস স্টেশনের মিনি ক্যান্টনমেন্টের পতন ঘটে। এই পতনের মধ্য দিয়ে হানাদার মুক্ত হয় পুরো গোপালগঞ্জ অঞ্চল।

দিনটি পালন উপলক্ষে মঙ্গলবার কাশিয়ানীর ভাটিয়াপাড়া স্কুল মাঠে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা, ক্রেস্ট বিতরণ, আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। আলোচনা সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মুহম্মদ ফারুক খান এমপি উপস্থিত থাকবেন। এছাড়াও ভাটিয়াপাড়া যুদ্ধে অংশগ্রহনকারী বীর মুক্তিযোদ্ধারা উপস্থিত থেকে আলোচনা সভায় অংশ নেবেন।

সারা দেশ যখন বিজয়ের আনন্দে উদ্বেলিত ও আত্মহারা-সে সময়েও গোপালগঞ্জের ভাটিয়াপাড়ায় পাক হানাদাররা যুদ্ধ করে যাচ্ছিল। বিজয়ের তিন দিন পর প্রচণ্ড যুদ্ধের পর এই দিনে কাশিয়ানীর ভাটিয়াপাড়ায় পাকিস্তানি সৈন্যরা আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। পাকিস্তানি বাহিনীর ভাটিয়াপাড়া মিনি ক্যান্টনমেন্টটি গোপালগঞ্জের অন্তর্ভুক্ত হলেও গোপালগঞ্জ-ফরিদপুর-নড়াইল অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধাদের লক্ষ্য বস্তু ছিল ভাটিয়াপাড়ার ওই মিনি ক্যান্টনমেন্টটি।

পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ৭১ সালের মে মাসে এখানে সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করে। ৬৫ জনের শক্তিশালী পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর একটি গ্রুপ এখানে অবস্থান করে এলাকায় নিরীহ মুক্তিকামী মানুষের ওপর নির্যাতন, নিপীড়ন ও হত্যাযজ্ঞ চালায়। অনেক মুক্তিকামী মানুষকে পাকিস্তানি বাহিনী হত্যা করে ভাটিয়াপাড়ার পাশ দিয়ে প্রবাহিত মধুমতি নদীর পানিতে ফেলে দিতো।

পাকিস্তানি বাহিনীর একটি দল গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা সংলগ্ন ‘জয় বাংলা’ পুকুর পাড়ের মিনি ক্যান্টনমেন্ট থেকে ৭ ডিসেম্বর সকালে আধুনিক অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে পালিয়ে ভাটিয়াপাড়ার ওই ক্যাম্পে অবস্থান নেয়।

১৯ শে ডিসেম্বর খুব ভোরে নড়াইল জেলার দিক থেকে ৮নং সেক্টরের কমান্ডার মেজর মঞ্জুর, নড়াইল জোনের মুক্তিবাহিনীর কমান্ডার ক্যাপ্টেন হুদা, লে. কর্নেল জোয়ান, কামাল সিদ্দিকী, গোপালগঞ্জ ও ফরিদপুরের দিক থেকে ক্যাপ্টেন ইসমত কাদির গামা ও বাবুলের নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনীর কমান্ডারগণ সম্মিলিতভাবে ভাটিয়াপাড়ার মিনি ক্যান্টনমেন্টে আক্রমণ চালায়।

কাশিয়ানী উপজেলা ইউনিট কমান্ড-এর সাবেক কমান্ডার এনায়েত হোসেন জানান, মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বাত্মক এ হামলা ও বীরোচিত সাহসী যুদ্ধে অবশেষে দুপুরের দিকে মুক্তি ও মিত্র বাহিনীর যৌথ কমান্ডারের কাছে ৬৫ জন পাকিস্তানি সেনা ও শতাধিক রাজাকার আত্মসর্মপণ করে। দেশ স্বাধীনের তিন দিন পর হানাদার মুক্ত হয় কাশিয়ানীর ভাটিয়াপাড়াসহ সমগ্র গোপালগঞ্জ অঞ্চল।