ইজতেমায় দিনে ২০ ঘণ্টা খাবার বিক্রি

বিশ্ব ইজতেমায় মুসল্লিরামুসল্লিদের সমাগমে মুখরিত হয়ে উঠেছে বিশ্ব ইজতেমা ময়দান। ফলে ব্যস্ত সময় কাটছে টঙ্গীর খাবার হোটেলের ব্যবসায়ী ও কর্মচারীদের। বিপুল জনসমাগম হওয়ায় দিনে ২০ ঘণ্টা খাবার বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের। শুধু নামিদামি হোটেলই নয়, ভাসমান হোটেল মালিকদের ব্যবসাও এখন রমরমা।

জানা যায়, জামাতবন্দি লোক ছাড়া ইজতেমায় যোগ দেওয়া প্রায় সবাই টঙ্গীর বিভিন্ন খাবার হোটেলে ভিড় করেন। বিভিন্ন জামাতে নামাজ আদায়কারী, মোনাজাতে অংশ নেওয়া ও জুমার নামাজে শরিক হতে আসা মুসল্লিরা খাবারের জন্য বেছে নেন হোটেল। ইজতেমায় সাধারণত জামাতবন্দি মানুষ হোটেলে খেতে যান না।

টঙ্গী সিটি করপোরেশন ১ নং জোন অফিসের পাশে নূরে আল মদীনা হোটেলের পরিবেশক জামাল উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, প্রতি বছর ইজতেমার সময় কেনাবেচা বেড়ে যায়। মানুষের ভিড় থাকায় দিনের প্রায় ২০ ঘণ্টা খাবার বিক্রি হয়। বছরের অন্যান্য সময়ে সাধারণত দিনে ২০ হাজার টাকার বেচাকেনা হয়। ইজতেমা মৌসুমে প্রতিদিন প্রায় অর্ধলক্ষ টাকার কেনাবেচা হচ্ছে তাদের দোকানে।

পাশের কলমিলতা হোটেলের পরিবেশক মিঠু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ইজতেমার সময় খাবারের মূল্য অন্য সময়ের চেয়ে কিছুটা কমিয়ে রাখা হয়। মুসল্লিদের সুবিধার্থে ও বিশেষ সেবাদানের জন্যই আমরা খাবারের দাম কমিয়ে দেই।’

টঙ্গী স্টেশন রোড এলাকার মোল্লা হোটেলের মালিক মোকসেদ মোল্লা বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, তাদের এখানে ভাতের চেয়ে বেশি চলে রুটি। দিনের বেশিরভাগ সময় রুটির চাহিদা লেগেই থাকে।

তবে হোটেলগুলোর খাবারের মান নিয়ে ক্রেতাদের অভিযোগও রয়েছে। নারায়ণগঞ্জের চাষাড়ার হার্ডওয়্যার ব্যবসায়ী সোলায়মান হকের অভিযোগ, ‘খাবার হোটেলগুলো ইজতেমার সময় কৌশলে নিম্নমানের খাবার পরিবেশন করে। এমনিতে আবহাওয়া শীতল, তার ওপর ঠাণ্ডা রুটিই গরম করে বিক্রি হচ্ছে।’

দুই-তিন ঘণ্টা আগের বানানো খাবার গরম করে দেওয়ায় মান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন অনেকে। ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার পাঁচুয়া গ্রামের আলতাফ হোসেন জানালেন, হোটেলগুলোতে চাহিদা অনুযায়ী খাবার পাওয়া যায় না। তার ভাষ্য, ‘মুসল্লিদের চাপ থাকায় তারা যা পরিবেশন করে তাই বাধ্য হয়ে খেতে হয়।’

এ প্রসঙ্গে টঙ্গী বাজারের মায়া হোটেলের তত্ত্বাবধায়ক আনোয়ার হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ইজতেমায় প্রচুর মানুষ আসেন, এ কারণে বিভিন্ন প্রকার খাবার আয়োজনের দিকে গুরুত্ব দেওয়া যায় না। মান বজায় রাখার প্রতি গুরুত্ব দিতে গিয়ে তা সম্ভবও হয় না।’

এদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ভাসমান হোটেলগুলো সরিয়ে দেন। এ কথা স্বীকার করে টঙ্গী স্টেশন রোডের ভাসমান খাবার হোটেল মালিক আলাউদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বললেন, ‘উচ্ছেদ অভিযান হলে চলে যাই। অভিযান না হলে খাবার বিক্রি করি। ইজতেমায় বিক্রি বেশি হয়। আমাদের খাবারের মান সবসময় একরকম।’

শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) ফজরের নামাজের পর থেকে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শুরু হয়েছে। রবিবার (১৪ জানুয়ারি) আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে প্রথম পর্ব। চার দিন বিরতি দিয়ে ১৯ জানুয়ারি শুরু হবে দ্বিতীয় পর্ব। ২১ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের বিশ্ব ইজতেমার আসর।