মুরগির ডিমের দাম কমে যাওয়ায় লোকসানের মুখে পড়েছেন কিশোরগঞ্জের খামারিরা। লাভ দূরে থাক, ডিমের উৎপাদন খরচও পাচ্ছেন না তারা। এ অবস্থায় মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’য়ের মতো বেড়ে গেছে মুরগির খাবার ও ওষুধপত্রের দাম। ফলে অনেকে পুঁজি হারানোর শঙ্কায় রয়েছেন। দিনের পর দিন লোকসান দিয়ে এরইমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে বেশ কিছু খামার।
সদর উপজেলার কুট্টাগড় গ্রামের খামারি আবদুর রহমান জানান, প্রতিটি ডিমের উৎপাদন খরচ পড়ে প্রায় ৫ টাকা। অথচ এই ডিম বাজারে বিক্রি করতে হচ্ছে আমাদের ৪ টাকা ২০ পয়সা থেকে সাড়ে চার টাকায়। ফলে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ টাকা লোকসান হচ্ছে। ডিমপ্রতি যদি এক টাকা লাভ থাকতো, তাহলেই আমরা টিকে থাকতে পারতাম। আমার খামারে তিন হাজার মুরগি আছে। প্রতিদিন আমার দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা লোকসান হচ্ছে। আগামীতে আর এ ব্যবসায় পা বাড়াবো না।
২০০৯ সালে প্রতি হালি ডিমের দাম ছিল ২৮ টাকা, ২০১৬ সালে ডিমের দাম বেড়ে দাঁড়ায় ৩৪ টাকায়। পরের বছর ৩২ টাকায় বিক্রি হয় এক হালি ডিম। আর এ বছর ডিমের বাজারে ধস নামে। বর্তমানে বাজারে এক হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ২২ থেকে ২৪ টাকায়। খামারিরা মনে করেন, বড় বড় কোম্পানিগুলো আগে কেবল বাচ্চা উৎপাদন করত, এখন তারাও ডিম উৎপাদন করছে। ফলে প্রান্তিক খামারিরা প্রতিযোগিতায় মার খাচ্ছে ওদের সঙ্গে। এছাড়া মুরগির খাবার এবং ওষুধপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় লোকসানের পরিমাণ আরও বাড়ছে।
জেলা পোল্ট্রি ফিড ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মাসুম খান বলেন, ‘বড় বড় কোম্পানিগুলো আগে শুধু মুরগির বাচ্চা উৎপাদন করতো। এখন তারা বাণিজ্যিকভাবে ডিমও উৎপাদন করে থাকে। তাদের ডিম উৎপাদন খরচ অনেক কম হলেও তৃণমূলে খামারিদের খরচ অনেক বেশি। যার কারণে গ্রামের ছোট খামারিরা কোনোভাবেই পেরে উঠছেন না।’
কিশোরগঞ্জ প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের ভেটেরিনারি সার্জন ডা. মো. বাহাদুর আলী বলেন, ‘খামারগুলোকে আমরা রেজিস্ট্রেশনের আওতায় আনতে না পারায় খামারিরা প্রয়োজনীয় সহযোগিতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আমরা সবাইকে নিবন্ধনের আওতায় আনার চেষ্টা করছি। নিবন্ধন হলে সবকিছু একটা সিস্টেমের মধ্যে চলে আসবে। সবাই বুঝে শুনে তারপর খামার করবে।’