তেলের ৩৪ লাখ টাকা বাকি, অ্যাম্বুলেন্স বন্ধ

হাসপাতালে বন্ধ হয়ে পড়ে থাকা অ্যাম্বুলেন্স
রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সের জ্বালানি তেল সরবরাহকারী পাম্পে প্রায় ৩৪ লাখ টাকা বাকি পড়েছে। এ কারণে তেল সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছেন পাম্প কর্তৃপক্ষ। ফলে ১৩ দিন ধরে হাসপাতালের দুটি অ্যাম্বুলেন্সই বন্ধ রয়েছে। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা।

তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছেন, এ ব্যাপারে বারবার স্বাস্থ্য অধিদফতরকে অবহিত করা হলেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

হাসপাতালের হিসাব বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত তিন বছরে অ্যাম্বুলেন্সের জ্বালানি তেল সরবরাহকারী পাম্পে বকেয়া পড়েছে প্রায় ৩৪ লাখ টাকা। এ কারণে গত ৮ মে থেকে পাম্প কর্তৃপক্ষ তেল সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছেন। এরপর থেকেই বন্ধ হয়ে গেছে হাসপাতালের দুটি অ্যাম্বুলেন্স।

১০০ শয্যাবিশিষ্ট এ হাসপাতালটিতে গড়ে প্রতিদিন প্রায় সাড়ে ৫শ’র বেশি রোগী চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করেন। সরকারি অ্যাম্বুলেন্সে বন্ধ থাকায় রোগীদের বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সে ও ভাড়া মাইক্রোবাসে করে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাশের জেলা ফরিদপুর ও ঢাকায় নিয়ে যেতে হচ্ছে স্বজনদের। এতে খরচ গুনতে হচ্ছে তিনগুণ বেশি।

হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা মাসুম বিশ্বাস বলেন, ‘এখানে এসে দেখলাম পরিবেশ খুব নোংরা। চিকিৎসক সংকটও রয়েছে। পাশাপাশি উন্নত চিকিৎসার জন্য ফরিদপুর ও ঢাকায় যাওয়ার জন্য যে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে, তা বেশ কিছু দিন ধরে বন্ধ। এ কারণে আমরা সাধারণ মানুষ খুবই বিপদে পড়েছি।’

রাজবাড়ি ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল

জেলার গোয়ালন্দ থেকে আসা এক রোগীর স্বজন সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘জরুরি ভিত্তিতে রোগীকে ফরিদপুর নিতে হবে। এখন শুনলাম সরকারি অ্যাম্বুলেন্স দুটি নাকি তেলের টাকা বাকি থাকায় ১২ দিন ধরে বন্ধ।’

জেলার বালিয়াকান্দি থেকে হাসপাতালে আসা রোগীর স্বজন মাসুদ বিশ্বাস ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, ‘সরকারি হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সে যেখানে হাজার টাকার মধ্যে ফরিদপুর যেতে পারতাম, সেখানে এখন আড়াই হাজার টাকা দিয়ে বাইরে থেকে মাইক্রোবাস ভাড়া করতে হচ্ছে’।

রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের গাড়িচালক মো. মাইনউদ্দিন জানান, ‘রাজবাড়ী সদর হাসপাতাল থেকে রোগী নিয়ে ফরিদপুর জেলায় গেলে প্রতি কিলোমিটার ১০ টাকা হিসেবে ৬৬০ টাকা ভাড়া হয়। আর রাজবাড়ী জেলার পৌরসভার ভিতরে লোকাল ভাড়া ২০০ টাকা। কিন্তু অন্যান্য গাড়িতে খরচ হয় দুই হাজারেরও বেশি টাকা। এসব কারণে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স বেশি ব্যবহার করা হয়।’
তেলের পাম্পে প্রায় ৩৪ লাখ টাকা বকেয়ার কথা স্বীকার করে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. ওবাইদুর রহমান জানান, ‘অ্যাম্বুলেন্সের তেলের টাকা পরিশোধ করার দায়িত্ব স্বাস্থ্য অধিদফতরের। প্রায় ৩৪ লক্ষ টাকা বাকি থাকার বিষয়টি স্বাস্থ্য অধিদফতরকে চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। এখনও এ ব্যাপারে কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। তবে বিষয়টি দ্রুততার সঙ্গে সমাধানের চেষ্টা চলছে।’

আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ও তথ্য কর্মকর্তা ডা. আলী আহসান তুহিন জানান, হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স বন্ধ থাকায় জরুরি রোগীদের সেবায় ফায়ার সার্ভিসসহ অন্যান্য সরকারি দফতরের অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।