‘কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হয়নি, শুধুই কথার ফুলঝুরি’

গাজীপুর মহানগরের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের রাজেন্দ্রপুর থেকে গাজারিয়াপাড়া মিয়া বাড়ি সড়ক২৬ জুন গাজীপুর সিটি করপোরেশনে ভোট গ্রহণ করা হবে। প্রার্থীরা দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। আর ভোটাররা বলছেন— সিটি করপোরেশন হওয়ার পর কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হয়নি। শুধুই কথার ফুলঝুরি শোনানো হয়েছে। তারা এবারের ভোট অতীতকে স্মরণে রেখেই দেবেন।

বাসিন্দাদের অভিযোগ অনেক এলাকায় সড়কবাতি নেই। বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থাও নেই। রাস্তা চলাচলের অনুপযোগী। কিন্তু, করের বোঝা ঠিকই চাপানো হয়েছে।

১৭ নম্বর ওয়ার্ডের যোগীতলা এলাকার বাসিন্দা আব্দুস সোবাহান বলেন, ‘এখনও কাদা পানি মাড়িয়ে বাসস্থানে যেতে হয়। শহরের বর্জ্য থাকে বাড়ির পাশে রাস্তার ওপর বা সড়কের পাশে।’  একই এলাকার বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘পানি নিষ্কাশনের সুষ্ঠু কোনও ব্যবস্থা নেই। গত ৬ বছরে এ ব্যবস্থার কোনও সমাধান হয়নি। চন্দ্রা এলাকায় একটি বড় ড্রেন হয়েছে। কিন্তু, বাসাবাড়ির পানি সেই ড্রেনে নেমে যাওয়ার কোনও সুষ্ঠু ব্যবস্থা করা হয়নি।’

১৭ নম্বর ওয়ার্ডের চান্না এলাকার বাসিন্দা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আমীর হোসেন বলেন, ‘বর্ষা বা শুষ্ক মৌসুমের অধিকাংশ সময় বাসস্থানের যাতায়াতের পথে পানি জমে থাকে। বিশুদ্ধ পানিরও কোনও ব্যবস্থা নেই। মহানগর প্রতিষ্ঠার আগে থেকে ড্রেনেজ সমস্যায় ভুগছি। করও দিচ্ছি নিয়মিত। দ্বিতীয়বার ভোটের সময় এসে গেছে। ভোট শেষও হবে। আমাদের সমস্যা শেষ হবে কিনা জানি না।’

গাজীপুর মহানগরের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বাংলাবাজার-মির্জাপুর সড়কমোগরখাল এলাকার বাসিন্দা আফজাল হোসেনের বাড়ি কুমিল্লা জেলায়। তিনি ওই এলাকায় গত আট বছর যাবত সপরিবারে ভাড়া থাকছেন। কখনো এ বাড়ি ও বাড়ি করে তিনবার বাড়ি পাল্টিয়েছেন। প্রত্যেকবারই বাসস্থানে যাতায়াত অসুবিধার কারণে তাকে বাড়ি পাল্টাতে হয়েছে। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রাতে মোবাইলের লাইট জ্বালিয়ে বাসায় যেতে হয়, অথচ থাকি মহানগরে।’

মহানগরের কাউলতিয়া পলানপাড়া এলাকার বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন পালোয়ান বলেন, ‘কারও বাড়ির পেছনে জমির আইল আবার কারও বাড়ির গোসলখানার ড্রেনের পাশ দিয়ে বাড়িতে যাতায়াত করতে হয়। ইটের রাস্তাতো দূরের কথা মাটি ফেলে রাস্তা করে দেবে তারও খবর নেই। আর রাস্তা যেখানে নেই, সেখানে সড়ক বাতির চিন্তাতো আরও দূরে। এতো দুর্ভোগের মধ্যেও আবার করের বোঝা।’

গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন বলেন, ‘গত নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী এক লাখের বেশি ভোটে নির্বাচিত হয়েছে। সেই জনপ্রিয় মেয়রকে মাত্র ৬ মাসের মাথায় অনেকগুলো মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়। তাকে উন্নয়নমূলক কোনও কাজই করতে দেওয়া হয়নি।’

গাজীপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী সাইয়্যেদুল আলম বাবুল বলেন, ‘গত টার্মে বিএনপির প্রার্থী গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র ছিলেন, এখনও আছেন। কেন আশানুরূপ উন্নয়ন হয়নি, তা গাজীপুর মহানগরের মানুষ ভালো করে জানেন।’

গাজীপুর মহানগরের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বাংলাবাজার-মির্জাপুর সড়ক আগামী ২৬ জুন অনুষ্ঠিত হবে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন। এতে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম ও বিএনপির মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার।

২০১৩ সালে গাজীপুর ও টঙ্গি পৌরসভার ৩২৯ দশমিক ৫৩ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে এখানে ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৭শ ৩৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার সংখ্যা ৫ লাখ ৬৯ হাজার ৯৩৫ এবং নারী ভোটার সংখ্যা ৫ লাখ ৬৭ হাজার ৮০১ জন।

আরও পড়ুন: গাজীপুরে এক কাতারে আ.লীগ ও বিএনপি নেতারা