খাবারের অভাবে লোকালয়ে বানর, নজর নেই কর্তৃপক্ষের

খাবারের অভাবে বন থেকে লোকালয়ে বেরিয়ে এসেছে বানরের দলবনের ভিতর খাবার না পেয়ে লোকালয়ে এসে ভিড় করছে দুই শতাধিক বানর। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বানরগুলো খাবারের অপেক্ষায় থাকে। স্থানীয়দের সামান্য কিছু খাবারে কোনও রকমে বেঁচে আছে এরা । খাবার দিতে দেরি হলে স্থানীয়দের বাড়িতে গিয়েও হানা দিচ্ছে বানরগুলো।এটি টাঙ্গাইলের মধুপুর গড় শালবন বিহারের আওতাধীন ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার সন্তোষপুর এলাকার একটি চিত্র। স্থানীয়রা বলছেন, এমন পরিস্থিতিতেও কর্তৃপক্ষের তেমন কোনও তৎপরতা চোখে পড়ছে না।

লোকালয়ে বেরিয়ে আসা বানরদের দেখতে আসেন অনেকেই

বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম শালবন হিসেবে পরিচিত টাঙ্গাইলের মধুপুর গড়। একসময় সব ধরণের বন্যপ্রাণীর অভয়াশ্রম ছিল এই বনাঞ্চল। তবে সময়ের বিবর্তনে বনের অনেকাংশই উজাড় হয়ে গেছে। বনদস্যুদের আঘাতে দিন দিন উজাড় হচ্ছে বন। এতে করে অনেক বন্যপ্রাণীই এই বনাঞ্চল থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তবে এখনো টিকে আছে বানর। এসব বানরদের অবস্থা খুব বেশি ভাল নয়।বনে খাবারের অভাবে বানরের হানা দিচ্ছে লোকালয়ে।

সরেজমিনে দেখা যায়, বানরেরা খাবারের জন্য লোকালয়ে অবস্থান করছে। তাদের দেখার জন্য বিভিন্ন এলাকার লোকজন সেখানে ভিড় করছেন। সন্তোষপুর এলাকায় অস্থায়ীভাবে চারটি দোকানও বসানো হয়েছে। দেখতে আসা অনেকেই সেই দোকান থেকে খাবার কিনে দিচ্ছেন বানরগুলোকে। স্থানীয়দের খাবার ও দেখতে আসা লোকদের খাবারেই কোনও রকমে বেঁচে আছে বানরগুলো।

খাবারের অভাবে স্থানীয় দোকানে ভিড় করছে বানরেরা

স্থানীয়দের অভিযোগ, ‘বনের ভিতর খাবার না পেয়ে বানরগুলো লোকালয়ে এসে ভিড় করছে। খাবার কম পাওয়ায় দিন দিন বানরগুলোর স্বাস্থ্য হানি ঘটায় তারা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। খাবারের জন্য কখনো কখনো তারা আমাদের বাড়িঘরে হানা দিচ্ছে।’

স্থানীয় মুদি দোকানদার জয়নাল হোসেন বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে বানরগুলো খাবারের অভাবে এখানে অবস্থান করলেও সংশ্লিষ্টরা কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। আর এ কারণে বানরগুলো দিন দিন শুকিয়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।’

বন থেকে লোকালয়ে বেরিয়ে আসে বানর

স্থানীয় বিল্লাল হোসেন, আবু হানিফ, আমির উদ্দিনসহ কয়েকজন বলেন, ‘বানরগুলো খাবারের জন্য প্রতিদিন সকাল থেকেই এ এলাকায় অপেক্ষা করে। খাবারের জন্য অনেক সময় মানুষের ঘারেও উঠছে তারা। খাবার না দেওয়া পর্যন্ত ঘর থেকে নামছে না।’

স্থানীয় বিট কর্মকর্তা আশরাফুল আলম খান বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। বানরগুলোর জন্য মাসে দুই হাজার টাকা বরাদ্দ পেয়ে থাকি। সেই টাকা দিয়ে বানরের জন্য খাবার কিনে দেওয়া হয়।’ তিনি বলেন, ‘২০১৩-২০১৪ সালে পশুখাদ্য নামে একটি প্রকল্পের আওতায় এ বিটের পাশেই সাড়ে সাত হেক্টর জায়গায় পশুখাদ্যের বাগান করা হয়েছে।’

বানরকে খাবার দিচ্ছেন স্থানীয় এক দোকানি

বিভিন্ন প্রকার বারমাসি ও মৌসুমি ফলের গাছ লাগিয়ে প্রাকৃতিক খাবারের উৎস ও অভয়ারণ্য সৃষ্টির মাধ্যমে বানরগুলোকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন স্থানীয় সচেতনমহল।