নারায়ণগঞ্জের নিহত চারজনের পরিচয় শনাক্ত, মামলা দায়ের

লাশ উদ্ধারের ঘটনায় বক্তব্য রাখছেন নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আব্দুল্লাহ আল মামুননারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের পাঁচরুখী এলাকা থেকে উদ্ধার করা নিহত চার যুবকের পরিচয় মিলেছে। সোমবার সকাল থেকে দুপুর দুইটা পর্যন্ত নিহতদের স্বজনরা নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে এসে লাশ শনাক্ত করেন।

এদিকে ‘নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে গুলিবিদ্ধ চারজনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে হত্যা ও অস্ত্র আইনে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছে। রবিবার গভীর রাতে আড়াইহাজার থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রফিকউল্লাহ বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা দুটি দায়ের করেন।

এদিকে আড়াইহাজার থেকে উদ্ধার চারজনের লাশ শনাক্ত করেছে পরিবারের সদস্যরা। এর আগে রবিবার বিকালে লুৎফর রহমান মোল্লার (জব্দ গাড়ির চালক) লাশ শনাক্ত করেন তার স্ত্রী রামপুরার ওয়াপদা এলাকার রেশমা বেগম।

এছাড়া নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে রাখা অপর তিনজনের মধ্যে একজন পাবনা জেলার আতাইকুলা ইউনিয়নের ধর্মগ্রাম এলাকার খায়রুল সরদারের ছেলে মো. সবুজ সরদার (১৭)। খায়রুল সরদার হাসপাতালে এসে তার ছেলে সবুজের লাশ শনাক্ত করেন। সবুজ পাবনার স্থানীয় একটি বেকারি দোকানে কাজ করতো। অপর দুজন হলেন একই এলাকার জামাল উদ্দিনের ছেলে ফারুক হোসেন (৪০) ও লোকমান সরকারের ছেলে জহিরুল ইসলাম।

ফারুকের বাবা জামাল উদ্দিন হাসপাতালে এসে ছেলের লাশ শনাক্ত করেন এবং তার ছেলে বাস চালাতো বলে জানান। অন্যদিকে জহিরুলের শ্বশুর নজরুল ইসলাম মর্গে এসে তার লাশ শনাক্ত করেন। সেও বেকারি শ্রমিক ছিল বলে তিনি জানান।

ফারুক হোসেনের বাবা জামাল উদ্দিন জানান, গত সোমবার তার ছেলে ফারুকসহ চারজনকে ভুলতার গাউছিয়া থেকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। তার ছেলে ভুলতা-গাউছিয়ায় বাস চালাতো। পাবনায় থাকাকালে সে একটি বেকারির ভ্যান চালাতো। এরপর থেকে তারা নিখোঁজ ছিল। পরে টিভিতে লাশ উদ্ধারের সংবাদ পেয়ে তিনি নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে এসে ছেলের শনাক্ত করেন। একই সঙ্গে তিনি খায়রুল সরদারের ছেলে সবুজ সরদারের লাশও শনাক্ত করেন।

তিনি আরও বলেন, ‘লিটন ও জহিরুল ইসলাম নামে আরও দুজন নিখোঁজ রয়েছে।

জহিরুল ইসলামের শ্বশুর নজরুল ইসলাম জানান, ১০ দিন আগে জহিরুলের এক মামা ফরুক হোসেন তাকে কাজের কথা বলে ঢাকায় নিয়ে আসে। ফারুক ঢাকায় গাড়ি চালাতো। গত শুক্রবার (১৯ অক্টোবর) থেকে জহিরুলের কোনও খোঁজ না পেয়ে তিনি পাবনার বিভিন্ন থানায় যোগাযোগ করেন। রবিবার ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পারেন নারায়ণগঞ্জে অজ্ঞাত চারজনের লাশ পাওয়া গেছে। পরে তিনি নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে এসে লাশ শনাক্ত করেন। তিনি সরকারের কাছে এ হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়েছেন।

নিহত সবুজের বাবা খায়রুল সরদার বলেন, ‘পরিবারের ঋণের কিস্তির টাকা পরিশোধের জন্য ও বাড়তি আয়ের আশায় সবুজ সোমবার ঢাকায় যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়। এর পরদিন থেকেই সবুজের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল। আমার ছেলে বেকারিতে কাজ করতো। আমরা গরিব মানুষ। আমার ছেলে কোনও রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল না।’

আড়াইহাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমএ হক জানান, এ ঘটনায় এসআই রফিকউল্লাহ বাদী হয়ে আড়াইহাজার থানায় অস্ত্র ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দুটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, রবিবার নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার পাঁচরুখী এলাকায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের দু’পাশ থেকে চারজনের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময় এক রাউন্ড গুলিভর্তি দুটি পিস্তল ও একটি মাইক্রোবাস জব্দ করা হয়। ময়নাতদন্ত শেষে চিকিৎসক জানিয়েছেন, পেছন থেকে শর্টগান দিয়ে গুলি করে তাদের হত্যা করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, চার যুবক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। পুলিশ মামলা দুটি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছে।

জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ) মনিরুল ইসলাম বলেন, নিহতদের স্বজনদের অভিযোগ ঠিক না। গত বৃহস্পতিবার থেকে নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) বা জেলা পুলিশের কোনও টিম রূপগঞ্জে অভিযান চালায়নি।

তিনি আরও জানান, চারজনের মধ্যে একজনের লাশ গতকালই পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি তিনজনের লাশ এখনো মর্গে রয়েছে। পরিবারের সদ্স্যরা এসে লাশ শনাক্ত করেছে। এখন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের সার্টিফিকেট নিয়ে এলে লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।