দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দলের জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণে প্রকাশ্যে দ্বিধা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন দলের নেতাকর্মীরা। সভাপতি গ্রুপ উপজেলা কমিটি গঠন করলেও সাধারণ সম্পাদক গ্রুপ তা প্রত্যাখান করছে। আর নির্বাচনে মনোনয়ন নিয়ে এই সংকট আরও বাড়বে বলেই মনে করছে দলটির নেতাকর্মীরা। এদিকে সামনের নির্বাচনকে ঘিরে নাশকতার মামলার কারণেও মাঠ ছাড়া মানিকগঞ্জের বিএনপির নেতাকর্মীরা।
বিএনপি সংশ্লিষ্টরা জানান, মানিকগঞ্জকে এসময় বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে বিবেচনা করা হতো। ২০০৯ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের প্রয়াত মহাসচিব খন্দকার দেলোয়ার হোসেনসহ বিএনপির সব প্রার্থী মানিকগঞ্জে পরাজিত হন। ওই সময় খন্দকার দেলোয়ার হোসেন ও সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত হারুনার রশিদ খান মুন্নুর মধ্য অভ্যন্তরীণ কোন্দল ছিল। তাদের মৃত্যুর পরও তাদের সমর্থকদের মধ্যে কোন্দল মেটেনি।
২০১৩ সালের ৮ জুন গঠিত ১৬ সদস্য বিশিষ্ট জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককের মধ্যেও বিরোধ রয়েছে। এছাড়াও বিএনপির প্রয়াত মহাসচিব খন্দকার দেলোয়ার হোসেনের ছেলেদের সঙ্গে জেলা বিএনপির সভাপতির দ্বন্দ্ব রয়েছে। দলীয় কোন্দল আর বিরোধের কারণে দীর্ঘ দিন ধরে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক একত্রে কোনও দলীয় কর্মসূচি পালন করেননি।
জেলা বিএনপি অফিস দেখে চেনার কোনও উপায় নেই। শোকের ব্যানার আর নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবি সম্বলিত ব্যানারে ছেয়ে আছে দলীয় কার্যালয়টি। মাসে একবারও খোলা হয় না অফিস ঘরটি। তালাবদ্ধ অফিস ঘরের জানালার ফাঁক দিকে দেখা যায় মাকরশার ঝুল। আর ধুলোবালিতে আস্তর পরে গেছে একটি টেবিল আর ৭/৮টি চেয়ারে।
জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এসএ কবির জিন্নাহ বাংলা ট্রিবিউনের কাছে দলের অভ্যন্তরীণ বিরোধের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘২০১৩ সালে আফরোজা খান রিতাকে সভাপতি ও প্রকৌশলী মঈনুল ইসলাম খান শান্তুকে সাধারণ সম্পাদক করে ১৬ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। এরপর থেকে মাত্র দুই বার ওই কমিটির সদস্যরা একত্রে বসতে পেরেছিল। তারপর আর ওই কমিটির কোনও সভা হয়নি। যে কারণে পূর্ণাঙ্গ কোনও কমিটিও গঠন করা সম্ভব হয়নি।’
তিনি দলীয় কর্মসূচি তেমনভাবে পালন না করার কথাও স্বীকার করেন। তিনি আরও জানান, ‘বর্তমান সরকার আমাদের কোনও কর্মসূচি পালন করতে দিচ্ছে না। নেতাকর্মী, সমর্থক ও ভোটারদের নামে মামলা দেওয়া হচ্ছে। জেলা বিএনপির সভাপতি আফরোজা খান রিতা ছাড়া সব নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা মামলা দেওয়া অব্যাহত রয়েছে। যে কারণে দলের কর্মসূচি পালন করা সম্ভব হচ্ছে না।’
দলের সাংগঠনিক হ-য-ব-র-ল পরিস্থিতি জানতে দলের জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মঈনুল ইসলাম খান শান্তুর মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, এ বিষয়ে তিনি কোনও মন্তব্য করতে রাজি নন।
অপরদিকে জেলা বিএনপির সভাপতি আফরোজা খান রিতার মুঠো ফোনে একাধিকবার দলীয় সাংগঠনিক অবস্থা জানতে কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
মানিকগঞ্জ পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর মানিকগঞ্জের ৭টি থানায় ৫০টিরও বেশি নাশকতার মামলা হয়েছে। এসব মামলায় বিএনপি জামায়াতের ৮৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া ২০১৩ সাল থেকে চলতি মাস পর্যন্ত মানিকগঞ্জে শতাধিক নাশকতার মামলা হয়েছে। এসব মামলায় অনেক আসামি বর্তমানে কারাগারে রয়েছে।