রায়পুরায় সংঘর্ষের ঘটনায় আরেকটি হত্যা মামলা: দুইজনের লাশ গুমের অভিযোগ

নরসিংদী

নরসিংদীর রায়পুরার চরাঞ্চল বাঁশগাড়ী ও নিলক্ষা এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে ৩ জন নিহতের ঘটনায় আরেকটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। সোহরাব (৩৫) হত্যার ঘটনায় নিলক্ষা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হক সরকারসহ ২৬ জনকে আসামি করে মামলাটি দায়ের করা হয়। নিহত সোহরাবের মা সাফিয়া খাতুন বাদী হয়ে সোমবার (১৯ নভেম্বর) দুপুরে রায়পুরা থানায় মামলাটি দায়ের করেন।

এদিকে সংঘর্ষের পর থেকে দুইজনের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন তাদের পরিবার। রায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহসিন উল কাদির হত্যা মামলা দায়ের করার বিষয়টি নিশ্চিত করলেও নিখোঁজের বিষয়ে অভিযোগ পাননি বলে জানিয়েছেন।

এরআগে রবিবার (১৮ নভেম্বর) রাত সাড়ে নয়টার দিকে বাঁশগাড়ীর তোফায়েল রানা (১৮) হত্যার ঘটনায় ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফুল হকসহ ৪৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ১৫/২০ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করা হয়। তোফায়েল রানার বাবা আবদুল্লাহ ফকির বাদী হয়ে ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফুল হককে প্রধান আসামি করে ৪৭ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ১৫/২০ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।

এদিকে নিলক্ষার সংঘর্ষের ঘটনার পর থেকে বাঁশগাড়ীর বালুয়াকান্দি এলাকার জয়নাল মিয়ার ছেলে কাউছার (৩৫) ও রাজনগর এলাকার হয়রত আলীর ছেলে আবদুল হাই (২৮) নিখোঁজ রয়েছেন বলে দাবি করছেন পরিবারের লোকজন। তাদের অভিযোগ তাদের টেঁটাবিদ্ধ লাশের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখে তারা বিষয়টি নিশ্চিত হলেও মৃতদেহের কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। এ ব্যাপারে পরিবারের লোকজন পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও এর কোনও সুরাহা হয়নি।

এ ব্যাপারে নিখোঁজ কাউছারের বড় ভাই বাঁশগাড়ী ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের সদস্য গয়েছ আলী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার ভাই নিখোঁজ হওয়ার পরদিন শনিবার আমরা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে তার টেঁটাবিদ্ধ লাশ দেখে পুলিশকে জানাই। কিন্তু ঘটনার তিন দিন পার হয়ে গেলেও তারা আমার ভাইয়ের লাশের কোনও সন্ধান দিতে পারেনি।’

অপর নিখোঁজ আবদুল হাইয়ের ছোট ভাই আবদুল হান্নান বলেন, ‘আমার ভাই এক সচিবের গাড়ির ড্রাইভার ছিল। সে বৃহস্পতিবার বাড়িতে আসার পর শুক্রবার থেকে নিখোঁজ। পরে ফেসবুকে তার লাশের ছবি দেখতে পেয়ে পুলিশকে জানাই। কিন্তু এখনো তার কোনও খোঁজ পাচ্ছি না। হয়ত কেউ তার লাশটি গুম করে ফেলেছে। তা না হলে চারদিনেও সন্ধান নাই কেন?’

উল্লেখ্য, গত শুক্রবার (১৬ নভেম্বর) সকালে রায়পুরা উপজেলার চরাঞ্চল বাঁশগাড়ীতে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে চলমান বিরোধের জের ধরে প্রয়াত চেয়ারম্যান সিরাজুল হকের অনুসারী কবির সরকারের নেতৃত্বে প্রতিপক্ষ সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত হাফিজুর রহমান শাহেদ সরকারের অনুসারী জাকির হোসেনের সমর্থকদের ওপর হামলা চালানো হয়। এতে তোফায়েল রানা নামে এক এসএসসি পরীক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়। আহত হয় কমপক্ষে ১০ জন।

এর জের ধরে একইদিন দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নিলক্ষা ইউনিয়নেও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বর্তমান চেয়ারম্যান তাজুল ইসলামের অনুসারী ছমেদ আলীর নেতৃত্বে প্রতিপক্ষ সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হকের অনুসারী শহিদ মেম্বারের সমর্থকদের ওপর হামলা চালায়। এতে দু’পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লে প্রথমে তাজুল ইসলামের সমর্থক সোহরাব হোসেন (৩৫) ও পরে আবদুল হক সরকারের সমর্থক স্বপন মিয়া (৩৬)গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। আহত হয় কমপক্ষে ৪০ জন। এ ঘটনায় পুলিশ নিলক্ষা এলাকা থেকে ৯টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৪ রাউন্ড গুলিসহ ১৩ জনকে গ্রেফতার করে। এ ঘটনায় পৃথক দুটি অস্ত্র মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ পর্যন্ত তিনজন নিহতের ঘটনায় দুটি হত্যা মামলা করা হয়েছে। তবে স্বপন মিয়ার হত্যার ঘটনায় সোমবার বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত কোনও মামলা করেনি তার পরিবারের লোকজন।

রায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহসিন উল কাদির বলেন, ‘বাঁশগাড়ীর সংঘর্ষে নিহত স্কুলছাত্র তোফায়েলের বাবা আবদুল্লাহ ফকির বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। আর নিলক্ষার সোহরাব নিহতের ঘটনায় তার মা সাফিয়া খাতুন বাদী হয়ে আরও একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। এদিকে নিখোজ দু’জনের বিষয়ে কেউ কোনও অভিযোগ করেনি বলে জানান তিনি।