বুধবার দুপুরে গাজীপুর মহানগরের টঙ্গী আঞ্চলিক কার্যালয় প্রাঙ্গণে ইজতেমার প্রস্তুতি দেখতে গিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী আগের চেয়ে অনেক দক্ষ। কেউ কোনও ধরনের অপপ্রচার চালানোর চেষ্টা করলে আমরা তা তাৎক্ষণিক শনাক্ত করতে পারবো। তাই সবাইকে অনুরোধ করছি, আপনারা কেউ উসকানিমূলক ও বিভ্রান্তিমূলক কোনও মন্তব্য করবেন না।’
গাজীপুর জেলা প্রশাসক (ডিসি) ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আব্দুল্লাহ, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল। উপস্থিত ছিলেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, পুলিশের মহাপরিচালক জাবেদ পাটোয়ারী, র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার ওয়াই এম বেলালুর রহমান, গাজীপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) শামসুন্নাহার প্রমুখ। এ সময় বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তা ও প্রতিনিধিরা ইজতেমা মাঠের প্রস্তুতি ও অগ্রগতির কথা তুলে ধরেন।
বিদেশিদের অনুষ্ঠানে আসার জন্য ভিসা দেওয়ার ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘দুই মারকাজের লিস্ট অনুযায়ী যারা ভিসার জন্য আবেদন করবেন তাদের সবাইকে ভিসা দেওয়া হবে। এ ব্যাপারে ভারতে নিযুক্ত আমাদের রাষ্ট্রদূতকে বলে দেওয়া হবে। এছাড়া পৃথিবীর যেকোনও দেশ থেকে যদি কোনও মুসল্লি আসার জন্য রিকোয়েস্ট পাঠায়, তা আমাদের জানালে তাৎক্ষণিক ভিসার ব্যবস্থা করা হবে।’
এ সময় তিনি আপত্তিকর পোস্টার অপসারণ ও মাঠে পানি ছিটানোসহ বিভিন্ন বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্থানীয় মেয়র এবং জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেন।
মুরুব্বিদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ‘দুই পক্ষের সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী আপনারা চলবেন। ইজতেমায় কে আসবেন কে আসবেন না তা আগেই কথা হয়েছে। এসব নিয়ে নতুন করে আর কিছু বলার নেই। সেই দিনের (দুই পক্ষের) ডিসিশন অনুযায়ী আপনারা মন্ত্রণালয়ে লিস্ট পাঠান। আমরা ভিসার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। সেদিনের কথা অনুযায়ী যারা ইজতেমায় আসতে চাননি তারা আসবেন না। সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী দুই পক্ষের মুসল্লিরা মাঠে আসবেন এবং মাঠ ত্যাগ করবেন। মাঠের নিরাপত্তা রক্ষায় ১৯ সদস্যের একটি নিরাপত্তা সেল গঠন করা হয়েছে। মাঠ প্রস্তুতির কাজও প্রায় শেষ হয়ে গেছে।’
সরকার ইজতেমার কোনও কাজে হস্তক্ষেপ করবে না উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সব সিদ্ধান্ত আপনারা নেবেন, সবকিছু আপনারাই করবেন। আমরা বাইরে থেকে আপনাদের যা যা প্রয়োজন তার ব্যবস্থা করবো। আপনাদের কোনও ধরনের অসুবিধা হবে না। আপনারা শুধু ওয়াদা পালন করুন।’
এ সময় ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ আব্দুল্লাহ বলেন, ‘এবারের বিশ্ব ইজতেমা নিশ্চিত করতে কঠিন চ্যালেঞ্জ ও কঠিন শপথ নেওয়া হয়েছে। ইজতেমা নিয়ে সরকারের ইমেজ যেন নষ্ট না হয়।’ এজন্য তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী রাসেল বলেন, ‘এবারের ইজতেমার অনিশ্চয়তা চলে গেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর চেষ্টায় এবারের ইজতেমা বাস্তবায়ন হচ্ছে। ইজতেমা মাঠের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক টয়লেট, প্রয়োজনীয় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, তুরাগ নদী পারাপারে পন্টুনব্রিজ নির্মাণসহ সব কাজকর্ম সম্পন্ন হয়েছে।‘
মেয়র জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ইজতেমার সময় গাজীপুরের মূল সড়কে বিআরটি প্রকল্পের কাজ বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছি। সড়কে যাতে যানবাহন স্বাভাবিকভাবে চলতে পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে।’
অনুষ্ঠানে আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, ‘এবারের ইজতেমায় অন্য বছরের তুলনায় বেশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আগের বছরগুলোর তুলনায় এবার ইজতেমা এলাকায় সিসি ক্যামেরা বাড়ানো হয়েছে, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যও বেশি থাকবে। কি থ্রেড আছে তা মাথায় নিয়েই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।’ তিনি দুই পক্ষকে ১০ দফা সমঝোতা স্মারক মেনে চলার অনুরোধ জানান।
র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘ইজতেমা শুরুর ১৫ দিন আগে থেকে ইজতেমা এলাকায় ব্যাপক নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। ইজতেমায় পোশাকে ও সাদা পোশাকে র্যাব সদস্যদের তৎপরতা বাড়ানো হবে।’ এ ব্যাপারে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
মুরুব্বিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘মোনাজাতের পর মুসল্লিরা যাতে সুশৃঙ্খলভাবে মাঠ ত্যাগ করেন। আপনাদের মূলমঞ্চ থেকে এ ঘোষণা দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’