ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের পাশে আকাশের বাবার ‘নবী অ্যান্ড সন্স’ অটোরিকশার ওয়ার্কশপে তৈরি করা হয়েছে এই গাড়ি। এটি ঘণ্টায় ৪৫ কিলোমিটার বেগে প্রায় ১০ ঘণ্টা চলতে সক্ষম।
২০ বছর বয়সী এই তরুণ বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতাম নিজে একটি গাড়ি বানিয়ে সেই গাড়ি দিয়ে চলাফেরা করবো। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হলো ২০১৯ সালে এসে।’
ফতুল্লার ধর্মগঞ্জের একটি আলিয়া মাদ্রাসার নবম শ্রেণির ছাত্র আকাশ। তিন ভাই বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। আকাশ বলেন, ‘ধর্মগঞ্জে অটোরিকশা ও ইজিবাইকের বডি তৈরির জন্য কারখানা আছে তাদের। ওই কারখানায় অটোরিকশা ও ইজিবাইকের বডি বানাতে বানাতে তার মাথায় গাড়ি বানানোর চিন্তা আসে। পরে বাবা নবী হোসেনের কাছে গাড়ি বানানোর কথা বলেন। বাবা ছেলের কথায় সম্মতি দেন। সেই থেকেই যাত্রা শুরু। ক্যালেন্ডারে ল্যাম্বোরগিনি গাড়ির মডেল দেখেই সেটিকে অনুসরণ করে সামনে এগোতে থাকে তিনি। বাবার কাছ থেকে প্রতিদিন ১০০/২০০ টাকা নিয়ে অল্প অল্প করে কাজ শুরু করেন। ইউটিউব থেকে টিউটোরিয়ালও ফলো করতেন। ইস্পাতের পাত কেটে কেটে গাড়ির বডির শেপ তৈরি করেন। গাড়ির নকশা, নির্মাণ, জোড়াতালি সবই নিজের হাতে করেন তিনি।
আকাশ জানায়, গাড়িতে প্রায় ৫টি ব্যাটারি লাগানো হয়েছে, এগুলো প্রায় ১০ ঘণ্টা চলতে সক্ষম। আর এই ব্যাটারি পূর্ণ চার্জ হতে সময় লাগবে ৫ ঘণ্টা। এছাড়া ঘণ্টায় ৪৫ কিলোমিটার বেগে ছুটতে পারবে গাড়িটি। এটি তৈরি করতে ব্যয় হয়েছে সাড়ে ৩ লাখ টাকা। তবে গাড়ির বডি কার্বন ফাইবারে নিয়ে আসলে ৩ লাখ টাকাতেও বানানোও যাবে।
তবে গাড়িতে আরও কিছু কাজ বাকি আছে বলে জানায় এই তরুণ। যেমন গাড়ির দরজাগুলোয় সুইচ বসানো। যাতে এগুলো অটো খুলবে ও বন্ধ হয়ে যাবে।
আকাশ বলেন, ‘গাড়ি বানানোর খবর মিডিয়ায় আসার পর থেকেই এখন পর্যন্ত ৩০ জন গাড়ি তৈরি করে দেওয়ার অর্ডার দিয়েছেন। কিন্তু আমি কারও সঙ্গে কোনও প্রকার চুক্তি করিনি। তাদের বলেছি, আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে। কারণ যে গাড়িটি আমি বানিয়েছি, তার চেয়ে আরও ভালো গাড়ি কীভাবে তৈরি করা যায় সেটি নিয়ে চিন্তা করছি। সরকারি সহযোগিতা ও প্রযুক্তিগত সহায়তা পেলে বাংলাদেশেই উন্নতমানের গাড়ি বানানো সম্ভব।’
তিনি বলেন, ‘গাড়ি চালাতে দেওয়ার জন্য অনেকেই আমার ছেলেকে বিরক্ত করেছেন। সম্প্রতি একজন জোর করে গাড়ি চালাতে গিয়ে অ্যাক্সিডেন্ট করে সামনে কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। কষ্টে ছেলে দু’দিন কোনও কিছু খায়নি। পরে আবার তা মেরামত করেছে। তারপরও সব ত্রুটি এখনও যায়নি। গাড়িটি আমার ছেলের অনেক শখের। অযথা তাকে বিরক্ত না করতে অনুরোধ করছি সবার কাছে।’