‘বড় জাহাজের ছবি দেখিয়ে ছোট নৌকায় ওঠায় দালালেরা’

বাবা-মায়ের সঙ্গে তিউনিসিয়াফেরত মাদারীপুরের আজাদ রহমান (ছবি– প্রতিনিধি)‘লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার জন্য দালালের সঙ্গে কথা বলি। তারা প্রথমে একটি বড় জাহাজের ছবি দেখায় এবং এই জাহাজে সাগর পাড়ি দেওয়া হবে বলে জানায়। কিন্তু সাগর পাড়ে নিয়ে তারা ছোট নৌকায় উঠতে জোর করে। না উঠলে টাকা ফেরত দেবে না বলে জানায়। এমনকি, গুলি করে মেরে ফেলারও হুমকি দেয়। তাই বাধ্য হয়ে ওই নৌকায় উঠি।’

কথাগুলো আজাদ রহমানের। তিনি তিউনিসিয়ায় নিখোঁজ থাকার পর গত শুক্রবার (২১ জুন) দেশে ফিরেন এবং এর পরদিন শনিবার বিকালে মাদারীপুর সদর উপজেলার হাজরাপুর গ্রামে নিজ বাড়িতে ফিরেন।

আজাদ রহমান বলেন, ‘দালালেরা ৭৫ জনকে একটি বোটে উঠিয়ে সাগরপথে ইতালির উদ্দেশে পাঠায়। এর জন্য প্রতিজনের কাছ থেকে বাংলাদেশি টাকায় আড়াই লাখ করে নেয় তারা। বোটটি নষ্ট হলে সাগরের মধ্যে ভাসতে থাকে। বোটে লাইফ জ্যাকেট দেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তারা তাও দেয় নাই।’
তিনি বলেন, ‘সাগরে তিনদিন ভাসমান থাকার পরে খাবারের অভাবে আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ি। তখন আমরা একটি জাহাজের দেখা পাই। জাহাজটি দেখে আমরা সবাই হেল্প হেল্প বলে চিল্লাচিল্লি শুরু করি। কিন্তু ওই জাহাজ আমাদের তুলতে অনীহা দেখায়। এরপর বোটে থাকা তিনজন সাগরে লাফ দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করলে তিউনিসিয়ার ওই জাহাজ এসে আমাদের সবাইকে উদ্ধার করে।’
আজাদের বাবা হারুন বেপারী বলেন, ‘অভাবের সংসারে একটু ভালো থাকতে জমিজমা যা ছিল, অর্ধেকটা বিক্রি করে সাড়ে ৫ লাখ টাকা দিয়ে ছেলেরে লিবিয়া পাঠাই। সেখানে ৬ মাস ছিল। ২৩ দিন ধরে নিখোঁজ ছিল। আমার ছেলে জীবিত ফিরে এসেছে, আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। তবে এভাবে আর কেউ যেন বিদেশ না যায়।’

মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার উত্তম প্রসাদ পাঠক বলেন, ‘এই অঞ্চলে (মাদারীপুর) যেমন অসংখ্য প্রবাসী আছেন, তেমনি মানবপাচারকারী দালালচক্রও আছে। সাধারণ মানুষকে ভুল বুঝিয়ে সাগরপথে বিপদে ফেলে যারা ইউরোপে পাঠানোর চেষ্টা করে, পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের শনাক্ত করা হবে। এই দালালচক্রের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

লিবিয়ার ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়ার পথে তিউনেসিয়ায় নিখোঁজ থাকা ৬৪ বাংলাদেশির মধ্যে গত শুক্রবার দেশে ফিরেন ১৭ জন। এরমধ্যে রয়েছেন মাদারীপুরের ৮ জন। আজাদ ছাড়া বাকি সাতজন হলেন– কুনিয়ার মাহবুল মাতুব্বরের ছেলে রাজিব মাতুব্বর, মোকলেছুর মাতুব্বরের ছেলে রাসেল মাতুব্বর, ঘটকচরের লিয়াকত মাতুব্বরের ছেলে আকমান মাতুব্বর, লুৎফর মাতুব্বরের ছেলে লাদেন মাতুব্বর, রাজৈর উপজেলার দুর্গাবর্দী গ্রামের জুলহাস শেওয়ালের ছেলে জুয়েল শেওয়াল, গফুর মোল্লার ছেলে পেয়ার আলী, কালকিনি উপজেলার গোপালপুরের মীর মাহাবুবুর রহমানের ছেলে মীর আজিজুল ইসলাম। এই সাতজন ঢাকায় তাদের আত্মীয়-স্বজনের বাসায় আছেন।