সিরাজের ছোট ভাই মোহাম্মদ আলম মিয়া জানান, ‘সাত মাস আগে স্ত্রী সামসুন নাহারের সঙ্গে সিরাজ মিয়ার ডিভোর্স হয়। সামসুন নাহার মান্নান নামের এক যুবককে বিয়ে করে মেয়ে মিনজুকে (৭) সঙ্গে নিয়ে চলে যান। এরপর থেকেই বিভিন্ন জায়গায় ও স্কুলে-স্কুলে মেয়েকে খুঁজতো সিরাজ মিয়া। শুক্রবার (১৯ জুলাই) আমার জেঠাতো বোনকে ইশারা দিয়ে বলেছে, মেয়েকে খুঁজে পেয়েছে। শনিবার (২০ জুলাই) মেয়েকে আনতে যাবে। কিন্তু, ইশারা দিয়ে বলার কারণে কোন জায়গায় তার মেয়ে আছে, সেটি বুঝতে পারিনি। শনিবার সকালে মেয়েকে আনার কথা বলে সাইলো রোডের একটি ফ্ল্যাক্সিলোডের দোকান থেকে ১শ টাকা ধার নেয়।’
মোহাম্মদ আলম মিয়ার অভিযোগ, মেয়েকে কোলে করে আনার সময় হয়তো তার মা গলাকাটা বলে চিৎকার দিলে স্থানীয় লোকজন তাকে মারধর করে এবং ইট দিয়ে থেঁতলে হত্যা করে।
সিরাজের বাবা আব্দুর রশিদ মন্ডল দাবি করেন, খোঁজ পেয়ে মেয়েকে আনতে গেলে ছেলে ধরা সন্দেহে তার ছেলেকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। সামসুন নাহারের কারণেই তার ছেলেকে খুন করা হয়েছে।
এ ঘটনায় শনিবার (২০ জুলাই) রাতে এসআই সাখাওয়াত হোসেন বাদী হয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলার তদন্তকারী সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সেলিম মিয়া জানান, সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজ আইডিয়াল স্কুলের প্লে গ্রুপের ছাত্রী সাদিয়া (৬) নামের একটি মেয়েকে কোলে নিয়ে যাওয়ার সময় সিরাজ মিয়াকে ছেলে ধরা সন্দেহে মারধর করে হত্যা করা হয়। সিরাজ মিয়ার স্বজনদের দাবি, মেয়েটি সিরাজেরই। সিরাজের ছোট ভাই মোহাম্মদ আলম মিয়া মোবাইলফোনে ধারণ করা সিরাজের মেয়ে মিনজুর ছবি নিয়ে থানায় এসেছিলেন। মোবাইলের ছবির সঙ্গে উদ্ধার হওয়া সাদিয়ার চেহারার কিছু মিল রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, চেহারায় মিল থাকার কারণেই সিরাজ সাদিয়াকে নিজের মেয়ে বলে কোলে নিয়েছিল। আমরা নিহত সিরাজের ডিএনএ পরীক্ষার জন্য আলামত সংগ্রহ করেছি। সাদিয়ার ডিএনএ পরীক্ষার জন্যও আলামত সংগ্রহ করা হবে। ডিএনএ পরীক্ষার পরই বোঝা যাবে সাদিয়া আসলে কার সন্তান।
প্রত্যক্ষদর্শী স্কুলশিক্ষক সাঈদ হৃদয়ার আহমেদ জানান, মিজমিজি আল আমিন নগর এলাকায় আইডিয়াল ইসলামিক কিন্ডার গার্টেন স্কুলের প্লে গ্রুপের এক শিক্ষার্থীকে সকাল ৮টার দিকে ধরে নিয়ে যাচ্ছিল এক যুবক। ওই শিক্ষার্থী তাকে দেখে স্যার স্যার বলে চিৎকার করলে যুবকটি তাকে নিজের মেয়ে বলে পরিচয় দেয়। এ সময় ওই যুবককে দাঁড়াতে বললে সে একটি রিকশা নিয়ে চলে যাওয়ার চেষ্টা করে। পরে পাশের লোকজন এসে তাকে আটক করে গণপিটুনি দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ তিনশ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সাত ভাইবোনের মধ্যে সবার বড় সিরাজ মিয়া রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। সিদ্ধিরগঞ্জের কলাবাগ সাইলো রোড এলাকার মোহর চানের বাড়িতে থাকতেন।
আরও খবর...
নারায়ণগঞ্জে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে নিহত যুবকের পরিচয় মিলেছে
নারায়ণগঞ্জে ছেলে ধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে যুবক নিহত