শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠে মসজিদ নির্মাণ না করার দাবি





সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন একজনকিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের একাংশে মডেল মসজিদ ও ইসলামিক কালচারাল সেন্টার কমপ্লেক্স নির্মাণ না করার দাবি জানিয়েছে নাগরিক সুরক্ষা মঞ্চ নামের একটি সংগঠন। শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় ঈদগাহ মাঠটির সামনে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মাঠের ভেতরে বিশাল জায়গা নিয়ে মসজিদ ও কমপ্লেক্স নির্মাণ হলে উপমহাদেশের বৃহত্তম ও ঐতিহ্যবাহী ঈদগাহ মাঠটি এর স্বকীয়তা হারাবে। প্রায় আড়াইশ’ বছরের পুরানো এ ঈদগাহের ঐতিহ্য নষ্ট হবে। এ মাঠে ঈদের নামাজ পড়তে আসা মুসল্লির সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। তাই মাঠের পরিধি আরও বাড়ানো উচিত। অথচ তা না করে উল্টো আরও জায়গা কমানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠমসজিদ ও কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য বিকল্প জায়গা হিসেবে মাঠের সীমানা প্রাচীরের বাইরে পৌরসভার গরুর হাটটিকে বেছে নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয় সংবাদ সম্মেলন থেকে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের আহ্বায়ক শেখ সেলিম কবির। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন— শিক্ষাবিদ আবু খালেদ পাঠান, সাবেক পৌর মেয়র আবু তাহের মিয়া, মৌলানা ইলিয়াস আমিনিসহ সংগঠনের নেতারা।
বক্তারা জানান, ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসক বরাবর স্বারকলিপি দেওয়া হয়েছে। আগামীকাল (১৪ সেপ্টেম্বর) রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ দাবির যৌক্তিকতা তুলে ধরা হবে। স্থানীয় সুধীজন, আলেম, শিক্ষাবিদ ও বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে মতোবিনিময়ের পাশাপাশি দাবির পক্ষে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করা হবে বলেও জানান তারা।
এর আগে গত ৭ সেপ্টেম্বর জেলা পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করে সংগঠনটি।
সংবাদ সম্মেলনে স্থানীয়রাইতিহাস থেকে জানা যায়, কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের পূর্বপ্রান্তে নরসুন্দা নদীর তীর ঘেঁষে অবস্থিত শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানটি প্রতিষ্ঠা করেন কিশোরগঞ্জ শহরের হয়বতনগর জমিদার বাড়ির লোকজন। বাংলার বারো ভুঁইয়ার অন্যতম নেতা ঈশা খাঁর ষষ্ঠ বংশধর ও হয়বতনগরের জমিদার দেওয়ান মান্নান দাঁদ খান তার মায়ের ইচ্ছা মোতাবেক ১৭৫০ সালে শোলাকিয়া ঈদগাহের জন্য চার দশমিক ৩৫ একর জমি দান করেন। হিসাব অনুসারে, শোলাকিয়া ঈদগাহের বয়স ২৬৯ বছর। প্রতিষ্ঠার ৭৭ বছর পর ১৮২৮ সালে এ মাঠে একসঙ্গে এক লাখ ২৫ হাজার অর্থাৎ সোয়ালাখ মুসল্লি­ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেন। এ সোয়ালাখ থেকে মাঠের নাম হয় ‘সোয়ালাখিয়া’, যা উচ্চারণ বিবর্তনে হয়েছে শোলাকিয়া। স্থানীয় হয়বতনগর সাহেব বাড়ির ঊর্ধ্বতন পুরুষ শাহ সুফি সৈয়দ আহমদ (রা.) ওই জামাতে ইমামতি করেন। কিশোরগঞ্জ মৌজার এ মাঠের মূল আয়তন বর্তমানে ছয় দশমিক ৬১ একর।