শুক্রবার (৮ মে) শ্রীপুরের বিভিন্ন বাগানে সরেজমিনে দেখে এই তথ্য জানা গেছে। বাগান মালিক আফাজ উদ্দিন বলেন, ‘আমার ছোট আকারের ৪৮টি লিচু গাছ রয়েছে। ফুল ফোটার পরই নারায়ণগঞ্জের বেপারিদের কাছে লিচু বাগান বিক্রি করে দিয়েছি। তবে বিক্রির সময় দেশে করোনা ছিল না। কিন্তু এখন লকডাউনের ফলে বাইরের বেপারিরা এলাকায় আসছেন না। অনেক বাগান মালিক নিজেরাই কীটনাশক প্রয়োগ ও পাহারার ব্যবস্থা করছেন। এতে বাগান মালিকদের ভোগান্তি ও উৎপাদন খরচ বেড়েছে।’
বাগান মালিক নূরুল আলম বিএসসি বলেন, ‘লিচুর ফুল ফোটার শুরুতে এলাকায় মধুর বক্স নিয়ে মৌচাষিরা আসতেন। তারা ফুল থাকাকালীন প্রায় ১৫ দিনের মতো মধু সংগ্রহ করতেন। এবার করোনা পরিস্থিতির কারণে লিচুর মধু সংগ্রহের প্রক্রিয়াটিও বাদ পড়েছে।’
আরেক বাগান মালিক এনামুল হক আকন্দ বলেন, ‘বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে এলাকায় বেপারি না আসলে নিজ উদ্যোগে বাগান মালিকদের ঢাকায় নিয়ে লিচু বিক্রি করতে হবে। এতে উৎপাদন খরচ বা সঠিক মূল্য না পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
কেওয়া পশ্চিম পাড়ার আলমাছ উদ্দিন বলেন, তার বাগানে ১৫০টি লিচু গাছ রয়েছে। সাড়ে সাত লাখ টাকায় বাগান বিক্রি করেছেন। তবে এবার জেলার বাইরের বেপারি আসেনি। এলাকার বেপারিদের কাছে বিক্রি করেছেন। দুই মাস আগে বিক্রির বায়না পেয়েছেন মাত্র ৬০ হাজার টাকা। করোনা পরিস্থিতি শুরুর পর বেপারিরা সময় মতো টাকা দিতে পারেননি। অন্যান্য বছর জেলার বাইরে থেকে বেপারি আসতেন। লিচুর দামও ভালো পাওয়া যেতো। কোনও কোনও বাগান মালিক এবার শ্রমিকের অভাবে সঠিকভাবে ও সময়মতো ওষুধ স্প্রে এবং প্রয়োজনীয় পরিচর্যাও করতে পারেনি। তারপরও ফলন ভালো হয়েছে।
লিচু শ্রমিক ফারুক হোসেন বলেন, ‘লিচু ফলনের চার মাস একটি গ্রামের বাগানগুলোতে কমপক্ষে ৩০০-৫০০ শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়। এবার করোনা পরিস্থিতি এ সম্ভাবনাকে ঝুঁকিতে ফেলেছে। বাগান মালিকেরা লিচুর ন্যায্য দাম না পেলে শ্রমিকের মজুরি পরিশোধে হিমশিম খাবেন।’
গাজীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মাহবুব আলম জানান, জেলায় প্রায় এক হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে লিচু আবাদ হয়েছে। গত বছর ফলন হয়েছিল ২৬ হাজার ৮৮০ মেট্রিক টন। প্রাকৃতিক দুর্যোগেও গাজীপুরে লিচুর ফলন বরাবরই ভালো হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। তবে জেলার মধ্যে শ্রীপুর উপজেলায় লিচুর আবাদ সবচেয়ে বেশি।
শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এস এম মুয়ীদুল হাসান বলেন, ‘শ্রীপুরে ৭২৫ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে। গত বছর এ উপজেলায় উৎপাদন হয়েছিল প্রায় চার হাজার মেট্রিক টন। গত দুই বছর ধরে ফলন বাড়ছে। শ্রীপুরের লিচু চাষিরা সচেতন। তারা আগে থেকেই কৃষি বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে প্রয়োজনীয় পরিচর্যার বিষয়গুলো জেনে তা বাগানে প্রয়োগ করেন। করোনা পরিস্থিতিতে বাগান মালিকেরা কৃষি বিভাগ থেকে প্রত্যয়ন নিয়ে নিজ উদ্যোগে পরিবহনের মাধ্যমে ঢাকার বিভিন্ন আড়তে লিচু বিক্রি করতে পারবেন। কৃষি বিভাগ এ ক্ষেত্রে সব প্রকার সহায়তা করবে।’