২৭০ বছরের ইতিহাস ভেঙে নীরব থাকবে লাখো মুসল্লির শোলাকিয়া

শোলাকিয়া ময়দান২৭০ বছরের ইতিহাস ভেঙে এই প্রথমে ঈদের দিনে শূন্য থাকবে শোলাকিয়ার ময়দান। থাকবে না লাখো মুসল্লির সমাগম। শত শত বছর ধরে দেশের বৃহৎ ঈদের জামাত হয়ে আসছে কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া  ময়দানে। উৎসবমুখর পরিবেশ ও নির্বিঘ্নে ঈদের জামাতের প্রস্তুতি নেওয়া হয় একমাস আগে থেকেই। শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার পরও যে মাঠে কমেনি লাখো মুসুল্লির সমাগম, সে মাঠ এবার ঈদের দিনে থাকবে জনশূন্য। অদৃশ্য এক ভাইরাস পাল্টে দিচ্ছে ইতিহাসের সকল সমীকরণ।
গত (১৫ মে) ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়ায় হচ্ছে না ঈদ জামাত। বিষয়টি নিশ্চিত করেছিলেন, জেলা প্রশাসক ও শোলাকিয়া ঈদগাহ কমিটির সভাপতি মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী। তিনি বলেছিলেন, শোলাকিয়ায় লাখো মুসুল্লির সমাগম হয় বিধায় তাদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে এবারের ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে না। মুসুল্লিদের জীবনের ঝুঁকি ও নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে ঈদের জামাত খোলা জায়গার পরিবর্তে নিকটস্থ মসজিদে আদায় করতে হবে। তাই একই মসজিদে একাধিক জামাত অনুষ্ঠিত হবে।

স্থানীয় বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ছোটবেলা থেকেই এই মাঠে ঈদের জামাত আদায় করে আসছি। ঈদের পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে দেখেছি অনেক আয়োজন। মাঠে কাতারের লাইন টানা, মাঠ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা, পানি সরবরাহ, পয়নিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়নসহ মুসল্লিদের নামাজ পড়ার উপযোগী করে তোলা। অথচ আজ শোলাকিয়া থমকে আছে। ভাবতে খুব কষ্ট হচ্ছে ঈদে মুসুল্লি শূন্য থাকবে আমাদের প্রিয় শোলাকিয়া মাঠ।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, শোলাকিয়া কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের একটি বৃহৎ ও পুরাতন জনবসতি এলাকা। বর্তমানে শোলাকিয়া নামক স্থানটির পূর্বনাম ছিল রাজাবাড়ীয়া। কিশোরগঞ্জ শহরের পূর্ব উত্তরকোনে নরসুন্দা নদীর অববাহিকায় শোলাকিয়া এলাকাটির অবস্থান। জনশ্রুতি আছে, শোলাকিয়া ঈদগাহের প্রথম বড় জামায়াতে সোয়া লাখ মুসল্লি অংশ নিয়েছিলেন। আবার কারও কারও মতে মুঘল আমলে এখানে অবস্থিত পরগনার রাজস্বের পরিমাণ ছিল সোয়া লাখ টাকা। উচ্চারণের বিবর্তনে সোয়া লাখ থেকে সোয়ালাখিয়া, সেখান থেকে বর্তমান শোলাকিয়া নামের উৎপত্তি।

দেওয়ান মান্নান দাদ খান ১৯৫০ সনে জমি ওয়াকফ করেন। সে ওয়াকফ নামায় লিখা আছে, ১৭৫০ সন থেকে এ মাঠে ঈদের জামাত হয়ে আসছে। সে হিসেব অনুযায়ী শোলাকিয়া মাঠের বর্তমান বয়স ২৭০ বছর। তারপর ১৮২৮ থেকে জঙ্গলবাড়ির জমিদার এ মাঠে নামাজ পড়তে শুরু করেন। তখন থেকেই বড় জামাত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। সে হিসেবে এবার শোলাকিয়া ঈদগাহে ঈদুল ফিতরের ১৯৩তম জামাত হবার কথা ছিল।