স্বপ্ন পূরণ করতে গিয়ে লিবিয়ায় লাশ হলো সুজন (অডিও)

সুজন মৃধা পরিবারের অভাব মেটাতে জানুয়ারিতে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের গোহালা ইউনিয়নের বামনডাঙ্গা গ্রামের সুজন মৃধা লিবিয়ায় পাড়ি জমায়। সুজনের বাবা কাবুল মৃধা একই ইউনিয়নের যাত্রাবাড়ী গ্রামের রব মোড়লের মাধ্যমে ছেলেকে লিবিয়া পাঠান। এজন্য তিনি দালালকে ৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা দেন। মহাজন থেকে ঋণ ও কৃষি জমি বন্ধক রেখে টাকা জোগাড় করেন তিনি। ৩৫ হাজার টাকা মাসিক বেতন দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু লিবিয়ায় যাওয়ার পর সুজনকে কোনও কাজ দেয়নি দালাল চক্র। বরং তাকে তুলে দেওয়া হয় মানবপাচার চক্রের হাতে। তারাই ২৬ মে সুজনের কাছে আরও ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। বিষয়টি সুজন তার পরিবারকে জানানোর পর তার বাবা ১ জুন পর্যন্ত সময় চান। কিন্তু তার আগেই সুজনকে গুলি করে হত্যা করে মানবপাচারকারীরা।

পরিবারের সুখ এবং উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশায় দালালের প্রলোভনে পড়ে সুজনের মতো অনেকেই প্রতিবছর বিদেশ যায়। অনেকে দালালের নির্যাতনে মারা যায়। আবার অনেকে মোটা অঙ্কের টাকা মুক্তিপণ দিয়ে মুক্তি পায়। তারপরও থেমে নেই বিদেশে যাওয়া। গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর ও শরীয়তপুরের বিভিন্ন এলাকায় দালাল চক্রের ফাঁদে পা দিয়ে অনেকেই জীবন দিচ্ছে। কিছুদিন এ নিয়ে হইচই হওয়ার পর আবার সব আগের মতো। আবারও দালাল চক্রের ফাঁদে পা দিয়ে লিবিয়া হয়ে ইতালি বা ইউরোপ যাওয়ার জন্য ভিড় করবে এসব এলাকার যুবকেরা।

সুজনের মায়ের আহাজারিমারা যাওয়ার আগে সুজন ২৬ মে তার বাবাকে মুক্তিপণের কথা জানিয়ে একটি অডিও রেকর্ড ভয়েসে পাঠায়। সেই অডিও রেকর্ডটি বাংলা ট্রিবিউনের হাতে এসেছে। সেসময় সে বাঁচার আকুতি জানায়। তার ওপর করা নির্যাতনের বর্ণনা দেয়। লিবিয়ায় অবস্থানরত বাংলাদেশি আমির দালালের মোবাইল ফোন থেকে অডিও রেকর্ডটি পাঠানো হয়। তাতে সোমালিয়ায় আহমেদ মোহাম্মদ আদম সালামের অ্যাকাউন্টে মুক্তিপণের টাকা পাঠাতে বলা হয়।

লিবিয়ায় মানবপাচারকারীদের গুলিতে নিহত সুজনের বাড়িতে এখন চলছে শোকের মাতম। সন্তানের লাশ ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আকুতি জানিয়েছে তার পরিবার।

সুজনের মা চায়না বেগম (৪৫) কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার ছেলেকে আমার বুকে ফিরায় দেও। আমার ছেলেকে দালালরা নিয়ে গিয়ে ১৭ দিন কোনও খাবার দেয়নি। মারধর করেছে। পরে মুক্তিপণ দাবি করে গুলি করে হত্যা করেছে। আমি আমার সন্তানের লাশ চাই। আর দালালদের ফাঁসি চাই। যাতে তারা আর কোনও মায়ের কোল খালি করতে না পারে।’

সুজনের মায়ের আহাজারি

এদিকে, একই উপজেলার সুন্দরদী গ্রামের কালাম শেখের ছেলে ওমর শেখ (২২) গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ত্রিপলি হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। পরিবারে সচ্ছলতার জন্য ৪ লাখ ৫ হাজার টাকা দিয়ে একই গ্রামের দালাল লিয়াকত মোল্লার মাধ্যমে ছেলেকে লিবিয়া পাঠান তার বাবা। ওমরের বাবা কালাম শেখ ও মা শাহিদা বেগম তার আহত ছেলেকে ফেরত চেয়েছেন। একইসঙ্গে দালাল চক্রের সদস্যদের গ্রেফতার করে ফাঁসির দাবি জানিয়েছেন।

একই দাবি জানিয়ে ওই গ্রামের জয়নাল সরদার, লিটন মৃধা ও আকিজুল ইসলাম বাবুল বলেছেন, এই দালাল চক্রের হাতে গোহালা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের আরও বেশ কিছু যুবক লিবিয়ায় বন্দি আছে। আমরা তাদের উদ্ধারের দাবি জানাচ্ছি। আর দালালদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তারা।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা বলেন, ‘আমরা গণমাধ্যম থেকে বিষয়টি জেনেছি। খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে ইউএনও-কে ওই এলাকায় পাঠানো হয়েছে। দালাল চক্র ধরতে চেষ্টা চালানো হচ্ছে।’ এজন্য তিনি সবার সহযোগিতাও চেয়েছেন।