শ্রীপুরে বন বেদখল, গড়ে উঠছে ঘরবাড়ি

সাতখামাইর বিটের উত্তর পেলাইদ গ্রামে (সুইক্কারচালা) বন কেটে নির্মাণ করা হয়েছে এই টিনশেড বাড়িগাজীপুরের শ্রীপুর রেঞ্জের সংরক্ষিত বনের জায়গা দখল করে তোলা হচ্ছে বসতবাড়ি। বনের ভেতর গজারি ও শালবনের গাছ কেটে ফেলা হয়েছে, জঙ্গল সাফ করে অবাধে গড়ে তোলা হচ্ছে এসব ঘরবাড়ি। এতে করে দিন দিন ছোট হয়ে আসছে বিভিন্ন বিটের বনভূমি। অসাধু বন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে দখলদারদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে এসব ঘরবাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা।

শ্রীপুরের বনভূমি তদারকিতে বন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দেখা যায় না। বনভূমি দখল উৎসব বন্ধে স্থানীয় বন বিভাগের কর্মকর্তাদের ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ। বনে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ হচ্ছে নামমাত্র এমন অভিযোগ স্থানীয় সচেতন মহলের। এসব বনের জায়গা দখল করছে সেখানকার প্রভাবশালী মহল ও ব্যক্তিগণ।

অভিযোগ রয়েছে, শ্রীপুর ফরেস্ট রেঞ্জে বর্তমান রেঞ্জ কর্মকর্তা আনিছুর রহমান যোগদানের পর থেকে রেকর্ড সংখ্যক বনভূমি বেদখল হয়েছে। তবে তার সঠিক কোনও হিসাব স্থানীয় বন বিভাগ জানাতে পারেনি। শ্রীপুর ফরেস্ট রেঞ্জের অধীনে ৭টি বিট অফিস রয়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, বনের জমি দখল করতে কোটি কোটি টাকার বিপুলসংখ্যক মূল্যবান গাছ আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়েছে।

রেঞ্জের সাতখামাইর বিটের উত্তর পেলাইদ এলাকায় বনভূমি উজাড় করে টাকার বিনিময়ে গড়ে উঠছে বসতবাড়ি। উপজেলার টেংরা, সাইটালিয়া, সাতখামাইর, পেলাইদ ও তেলিহাটি মৌজায় এক সময় ছিল শাল, গজারিসহ বিভিন্ন প্রজাতির ভেষজ, বনজ উদ্ভিদ। সামাজিক বনায়নের নামে সেসব জায়গা দখল করে গড়ে তোলা হয় উডলট বাগান। বন কর্মচারীদের সহায়তায় সেই বাগান পরিষ্কার করে বসতবাড়ি নির্মাণ করছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয় বন প্রহরী (গার্ড) বদিউজ্জামান ভূঁইয়া স্থানীয় স্বল্প আয়ের মানুষের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে বসতবাড়ি নির্মাণ করার মৌখিক অনুমতি দিচ্ছেন। উত্তর পেলাইদ গ্রামে (সুইক্কারচালা) বন কেটে একটি টিনশেড ঘর নির্মাণ করছেন কুলছুম আক্তার। তিনি বলেন, স্থানীয় তমিজ উদ্দিন, আব্দুল মালেক, সাঈদ মাস্টারের সঙ্গে মিলেমিশে সাতখামাইর বিটের বন প্রহরী বদিউজ্জামান ভূঁইয়া তাকে বাড়ি বানানোর মৌখিক অনুমতি দিয়েছেন। ওই চালায় ৮/১০টি বাড়ির নির্মাণ কাজ চলছে।

স্থানীয় শিক্ষক শহিদুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন যাবত ওই এলাকাসহ আশপাশের বনের জমিতে বসতবাড়ি নির্মাণের হিড়িক পড়েছে। কেউ বনের জমিতে ঘর তোলার সুযোগ পেলে তাকে দেখে আরও অনেকেই ঘর তুলতে আগ্রহী হচ্ছেন। এমন চলতে থাকলে একটা সময় হয়তো বনই ধ্বংস হয়ে যাবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাতখামাইর বিট এলাকার একাধিক বাসিন্দা বলেন, আশপাশের এলাকায় প্রতিনিয়ত বনের জমিতে নতুন নতুন বসতবাড়ি তৈরি করা হচ্ছে। এসব নির্মাণ কাজের সঙ্গে বন কর্মকর্তাদের যোগসাজশ রয়েছে।

মোটা অংকের টাকা নিয়ে ঘর নির্মাণের মৌখিক অনুমতি দেওয়ার কথা অস্বীকার করে বন প্রহরী (গার্ড) বদিউজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, কেউ হয়তো ব্যক্তি স্বার্থ হাসিল করতে না পেরে এমন অভিযোগ তুলেছেন। তবে বনের জমিতে গরিব-অসহায় মানুষ বাড়ি নির্মাণ করেন। মানবিক দিক বিবেচনায় অনেক সময় কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন হয়ে যায়।

তবে বনের ভেতর কাউকে বসবাসের অনুমতি দেননি দাবি করে শ্রীপুর ফরেস্ট রেঞ্জ কর্মকর্তা আনিছুর রহমান বলেন, বনের জমিতে বসতবাড়িসহ কোনও ধরনের স্থাপনা নির্মাণের নিয়ম নেই। কোথাও এ নিয়মের ব্যত্যয় ঘটলে বনের জমি রক্ষায় উচ্ছেদসহ দখলকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।