লাভ তো দূরের কথা খরচ ওঠানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় খামারিরা

আরিচা হাটে আসা রাজবাড়ীর রাজাবাবু
মানিকগঞ্জের আরিচা হাটে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া থেকে মোয়াজ্জেম হোসেন মুক্তার ৫টি গরু এনেছেন। তারই একটন ওজনের গরু ‘রাজবাড়ীর রাজাবাবু’র দাম হেঁকেছেন ৭ লাখ টাকা। গত ৫ দিনে মাত্র তিন জন গরুটির দাম করেছেন। রাজাবাবুর ক্রেতার চেয়ে দর্শনার্থীই বেশি। কাঙ্ক্ষিত দাম না পেলে গরুটি ফিরিয়ে নিয়ে যাবেন বলে জানান তিনি। গত ৫ দিনে পাঁচটি গরুর মধ্যে মাত্র দু’টি বিক্রি করেছেন। তাও কোনোমতে লালন পালনের খরচের টাকা উঠেছে।

মুক্তার জানালেন, তার গ্রামের আরও ৫০-৬০টি গরু এনেছেন ব্যবসায়ী ও খামারিরা। তাদের সবার অবস্থা তার মতোই প্রায়।

গরুর হাট
আরিচা ঘাটে কথা হয় দৌলতদিয়ার গরু ব্যবসায়ী আক্কাস শেখের সঙ্গে। তিনি জানালেন, শুক্রবার  তিনি আরিচা হাটে এসেছেন চারটি গরু নিয়ে।  মঙ্গলবার পর্যন্ত বিক্রি করতে পেরেছেন মাত্র একটি গরু। তাও বিক্রি করেছেন কেনা দামে। এই অবস্থা হলে গাবতলী হাটে নিয়ে যাবেন বাকি গরুগুলো।
ব্যবসায়ীরা জানান, হাটে আসা গরুর তুলনায় ক্রেতার পরিমাণ কম। তার ওপর গরুর দামও অনেক কম বলছেন তারা।

গরুর হাট

শিবালয়ের তেওতা ইউনিয়নের চর শিবালয়ের খামারি আলম শেখ জানালেন, স্থানীয় একটি এনজিওর কাছ থেকে কয়েক দফায় ঋণ নিয়ে তিনটি গরু লালন-পালন করেছেন। এখন গরুর দামের যে অবস্থা তাতে লালন পালনের খরচপাতি ওঠানো মহা মুশকিল। তার মতো মানিকগঞ্জের ছোট-বড় অনেক খামারি পশু বিক্রি লাভ তো দূরের কথা খরচাপাতি ওঠানোই নিয়ে মহা টেনশন আছেন। কোনোমতে খরচ উঠলেই গরু বিক্রি করে দিতে চান তারা। এমনকি অনেকে লোকসান দিয়ে হলেও গরু বিক্রি করতে রাজি। কারণ গরু বিক্রি  না হলে আরও একটি বছর লালন-পালন করতে হবে। এতে  লোকসান বাড়বে। এছাড়া বন্যার কারণে গো খাদ্যের সংকট এখন চরমে। করোনার জন্যও গরুর খাবার খরচের পাল্লাও ভারী হয়েছে। এসব কথা বিবেচনা করে লাভ নয়, মূলধন উঠলেই বিক্রি করতে প্রস্তুত অধিকাংশ খামারি।

গরুর হাট

মানিকগঞ্জে এবার ১৩টি হাট বসেছে। অন্যান্য বছর যে হাটে এসময় প্রতিদিন হাজারের ওপরে গরু বিক্রি হতো, এবার করোনার কারণে বিক্রি হচ্ছে অনেক কম।
শিবালয়ের আরেক গরুর খামারি আজিজ মোল্লা বলেন, ‘এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ৫টি গরু নিয়ে একটি খামার করেছি। গরুগুলোকে বিক্রি না করতে পারলে কীভাবে ঋণ পরিশোধ করবো ভেবেই পাচ্ছি না। গরুগুলো বিক্রি করে এখন আর লাভ করতে চাই না। যে টাকা গরুগুলোর পেছনে খরচ হয়েছে সে টাকা উঠলেই বেঁচে যাই।’

গরুর হাট
বাংলাদেশ ডেইরি অ্যাসোসিয়েশন মানিকগঞ্জের সভাপতি মহিনুর রহমান বলেন, গো খাদ্যের দাম বেড়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন খাতে করোনার জন্য প্রণোদনা দিয়েছেন। খামারিদের দাবি একটাই, গো-খাদ্যের দাম যেন কোনও অসাধু ব্যবসায়ী চক্র হুট করে না বাড়ায়।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মাহবুবুল ইসলাম জানান, উপজেলার গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়া খামারিদের বিভিন্ন পরামর্শ, গবাদির পশুর চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন এলাকায় কাজ চলছে।
জেলা প্রশাসক এস এম ফেরেদৌস জানান, জেলায় ৪৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে একহাজার ১৮০টি গবাদিপশু আশ্রয় নিয়েছে। গোখাদ্য ক্রয়ের জন্য ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।