মসজিদে বিস্ফোরণ: তিতাসের তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে ক্ষোভ

নারায়ণগঞ্জে মসজিদে বিস্ফোরণনারায়ণগঞ্জ তল্লা বাইতুস সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনা তদন্তে তিতাসের গঠিত কমিটির প্রতিবেদন নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন নিহতদের স্বজনসহ এলাকাবাসী এবং মসজিদ কমিটির সদস্যরা। নিহতদের পরিবার, এলাকাবাসী এবং মসজিদ কমিটির দাবি, তিতাস তাদের দায় এড়ানোর জন্য নিরপেক্ষ রিপোর্ট প্রকাশ করেনি। তিতাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাঁচানোর জন্যই তদন্ত প্রতিবেদনে নিজেদের দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করেছে তারা।

নারায়ণগঞ্জে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় বৃহস্পতিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) তিতাসের তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন দাখিল করে। রিপোর্টে গত ৪ সেপ্টেম্বর রাতে মসজিদের ভেতরে বিস্ফোরণে হতাহতের মূল কারণ হিসেবে মসজিদ কমিটির অবহেলাকে দায়ী করা হয়।

এ রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার (১৮ সেপ্টেম্বর) জুম্মার নামাজের পর মসজিদ কমিটির সভাপতি আবদুল গফুর তদন্ত প্রতিবেদনে অসন্তোষ  প্রকাশ করে বলেন, ‘তিতাস কর্তৃপক্ষ নিজেদের দায় এড়ানোর জন্য মসজিদ কমিটির ওপর দোষ চাপিয়েছে। তিতাস ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পরও তাদের এমন প্রতিবেদনে আমরা হতাশ।’ তিনি বলেন, ‘মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক তিতাস গ্যাস লিকেজ মেরামত করার জন্য তিতাস গ্যাস অফিসে গিয়েছিল। কিন্তু তারা সাধারণ সম্পাদকের কাছে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ চেয়েছিল। তদন্ত প্রতিবেদনে টাকার বিষয়ে কিছু উল্লেখ করা হয়নি। এতেই বোঝা যায় তিতাস কর্তৃপক্ষ যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে, তা শুধু নিজেদের রক্ষার কৌশল মাত্র।’

এদিকে, বিস্ফোরণে নিহত মসজিদের ইমাম মাওলানা আবদুল মালেক নেসারীর ছেলে নাইমুল ইসলাম জানান, নিহতদের পরিবারকে যেন ক্ষতিপূরণ দিতে না হয়, তিতাস সেই পায়তারা করছে। পরিকল্পিতভাবে তিতাস দায় এড়ানোর জন্য মসজিদ কর্তৃপক্ষকে দায়ী করছে। এ তদন্ত প্রতিবেদন পুনরায় পর্যবেক্ষণ করে আবারও দিতে হবে। তিতাস দায় এড়ানোর চেষ্টা করলে নিহতদের পরিবার প্রয়োজনে আন্দোলনে যাবে।

তিতাসের তদন্ত রিপোর্টে অসন্তোষ প্রকাশ করেছন অন্যান্য নিহতের পরিবারও। তাদের অভিযোগ, তিতাদের দেওয়া প্রতিবেদনটি সঠিক নয়।

নিহত জুবায়ের আহমেদের বাবা মোহাম্মদ নূর উদ্দিন জানান, নামাজ পড়তে গিয়ে আমার ছেলে মারা গেছে। কিন্তু কাদের কারণে ছেলেকে এভাবে জীবন দিতে হলো। তদন্ত প্রতিবেদনে তা স্পষ্ট হয়ে ওঠেনি। তিনি অবিলম্বে এই ঘটনার জন্য কারা দায়ী, কাদের গাফিলতির কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে; তা চিহ্নিত করে তাদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।

তিনি বলেন, ‘তিতাস গ্যাসের লিকেজ থেকে গ্যাস নির্গত হয়ে মসজিদের ভিতর জমাট বেঁধেছিল। তা বিদ্যুতের সংস্পর্শে এসে বিস্ফোরণ ঘটেছে। অথচ তিতাস ও জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটিতে কাউকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়নি; যা অত্যন্ত দুঃখজনক।’ তিনি তদন্ত প্রদিবেদনটি পুনরায় কারার দাবি জানান।

উল্লেখ্য, গত ৪ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জের বাইতুস সালাত মসজিদে বিস্ফোরণে ৩৮ জন দগ্ধ হন।এর মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩১ জনের মৃত্যু হয়।