সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের বহির্বিভাগ ও আন্তঃবিভাগে রোগীদের উপচে পড়া ভিড়। প্রতিদিন সাড়ে ৩০০-৪০০ রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসছেন। প্রতিটি ডাক্তারের রুমের সামনেই রোগীরা একজনের সঙ্গে আরেকজন গা ঘেঁষাঘেঁষি করে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। চিকিৎসকরা শুধু মাস্ক ব্যবহার করেই রোগী দেখছেন।
সদর উপজেলার বিনোদপুর গ্রাম থেকে আসা সুফিয়া বেগম বলেন, ‘আগে ডাক্তাররা জ্বর-ঠান্ডা হলে রোগী দেখতে চাইতেন না। দূর থেকে রোগী দেখতেন। এখন সব ঠিক হয়ে গেছে। ডাক্তাররা আগের মতোই রোগী দেখছেন।’
শুধু মাস্ক পরে রোগী দেখার বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সদর হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন, ‘হাসপাতালের অধিকাংশ চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীরাই ইতিমধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। কারও লক্ষণ দেখা দিয়েছে, কারও ছিল না। সবাই বর্তমানে সুস্থ আছেন। এই কারণে হাসপাতালে দায়িত্বরতদের মধ্যে করোনা নিয়ে আগের মতো আতঙ্ক নেই। পর্যাপ্ত পিপিই থাকলেও গরমের কারণে এগুলো পরা হচ্ছে না।’
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ৮ অক্টোবর পর্যন্ত মোট ৮ হাজার ৩৭৬ জনের নমুনা পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছিল। এর মধ্যে ১ হাজার ৭২০ জনের কোভিড-১৯ পজেটিভ এসেছে। করোনা আক্রান্তদের মধ্যে ১ হাজার ৬৪৮ জন সুস্থ হয়েছেন এবং ২৩ জন মারা গেছেন। বর্তমানে কোভিড-১৯ পজেটিভ রোগীর সংখ্যা ৪৯ জন। এরা সবাই নিজ বাড়িতে হোম আইসোলেশনে রয়েছেন।
জেলা সিভিল সার্জন এসএম আবদুল্লাহ মুরাদ বলেন, করোনা ঝুঁকি থাকলেও চিকিৎসক ও নার্সরা সতর্কতার সঙ্গে সব রোগীদের স্বাভাবিক সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
জেলা সদরের বিভিন্ন রাস্তা, বাজার ও অফিস ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ মানুষের মধ্যেই করোনা আতঙ্ক নেই। করোনার শুরুর দিকে প্রতিটি ব্যাংক স্বল্প সময়ের জন্য খোলা রাখাসহ বিভিন্ন বিধিনিষেধ থাকলেও এখন তার কিছুই নেই। ব্যাংকে ঢোকার সময় দু-একটি ব্যাংকে হ্যান্ড স্যানিটাইজেশনের ব্যবস্থা রাখলেও সব ব্যাংকে সেই ব্যবস্থাও নেই।
অনেক ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মাস্ক ছাড়াই ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছেন। সোনালী ব্যাংক শরীয়তপুর শাখার ব্যবস্থাপক কামরুল হাসান বলেন, ‘ব্যাংকের অধিকাংশ স্টাফই করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। তবে আল্লাহর রহমতে কোনও সমস্যা ছাড়াই সবাই সুস্থ হয়ে গেছেন। বর্তমানে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমরা সেবা প্রদান করে যাচ্ছি।’
জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের বলেন, রাস্তাঘাটে অনেকেই মাস্ক ছাড়া চলাচল করেন। স্বাস্থ্যবিধি মানেন না। এজন্য নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে তাদেরকে সতর্ক করার পাশাপাশি জরিমানাও করা হয়।