মধুমতি বাঁওড়ে অবৈধভাবে মাছ শিকার চলছেই

মধুমতি বাঁওড় গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে মধুমতি বাঁওড়ে বাঁশ পুঁতে কাঠা ফেলে অবৈধভাবে মাছ শিকার করছে প্রভাবশালীরা। এতে এলাকার দরিদ্র জেলেরা মাছ শিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। দ্রুত এই বাঁওড় থেকে অবৈধ কাঠা মুক্ত করার দাবি এলাকাবাসীর। তবে অবৈধ মাছ শিকারিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে মৎস্য বিভাগ।

জানা গেছে, ষাট দশকের শেষ দিকে মধুমতি নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে উপজেলার ফুকরা, তারাইল, পরানপুর, ঘোনাপাড়া, চাপ্তা, রাতইল, পাথরঘাটা, ধানকোড়া ও সুচাইল এলাকা নিয়ে বিশাল জলাশয় সৃষ্টি হয়। যা এখন মধুমতি বাঁওড় নামে পরিচিত। বাঁওড়টির আয়তন প্রায় ১৯২ হেক্টর। এ অঞ্চলের দরিদ্র জেলেদের মাছ শিকারের জন্য বাঁওড়টি সরকারিভাবে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। কিন্তু বর্তমানে এলাকার এক শ্রেণির প্রভাবশালী ব্যক্তি বাঁশ পুঁতে ও কাঠা ফেলে বাঁওড়টি দখলে রেখেছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, বাঁওড়ের তীরবর্তী এলাকায় কিছু প্রভাবশালী ও ধনী ব্যক্তি অবৈধভাবে বাঁশ পু্ঁতে কাঠা দিয়ে দখল করে রেখেছেন। অথচ তারা জেলে না।দীর্ঘদিন ধরে বাঁওড়টি দখলে রেখে বাঁওড় থেকে অবৈধভাবে জাল দিয়ে লাখ লাখ টাকার মাছ শিকার করছেন। অথচ এলাকার দরিদ্র জেলেরা বাঁওড়ে কোনও ধরণের জাল-দড়ি ফেলার সুযোগ পাচ্ছে না। এতে এক দিকে যেমন দরিদ্র জেলেরা মাছ শিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, অন্যদিকে ধবংস হচ্ছে দেশীয় মাছের অভয়াশ্রম।

স্থানীয়দের অভিযোগ, উপজেলার তারাইল, পরানপুর, ঘোনাপাড়া, চাপ্তা, রাতইল, পশ্চিম রাতইল এলাকায় মধুমতি বাঁওড়ে দুই থেকে তিন শতাধিক স্পটে বাঁশ পুঁতে কাঠা ফেলে মাছ শিকার করা হচ্ছে। মৎস্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তদারকি করেও প্রভাবশালীদের সঙ্গে পেরে না ওঠায় দিন দিন তাদের দখলে চলে যাচ্ছে বাঁওড়টি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক জেলে জানান, মধুমতি বাঁওড় এলাকার কিছু প্রভাবশালী বাঁশ পুঁতে কাঠা ফেলে এসব কাঁঠার সঙ্গে বেড় জাল ব্যবহার করে মাছ শিকার করছেন। দরিদ্র জেলেরা বাঁওড়ে মাছ ধরতে গেলে তারা উঠিয়ে দেয়, এমনকি মারধর করে। ফলে ভয়ে অনেকে বাঁওড়ে মাছ শিকার করতে যায় না।

রাতইল গ্রামের বাসিন্দা বকুল কাজী বলেন, মৎস্য আইনের সঠিক প্রয়োগ না থাকায় প্রভাবশালীরা অবৈধভাবে বাঁওড়ে মাছ শিকার করছে। ফলে দিন দিন এ অঞ্চল থেকে দেশীয় প্রজাতির মাছ হারিয়ে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে কাশিয়ানী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শাহজাহান সিরাজ বলেন, দেশি প্রজাতির মাছ সংরক্ষণের জন্য মধুমতি বাঁওড়ের কয়েকটি স্থানকে মৎস্য অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। কেউ বাঁশ পুঁতে কাঠা ফেলে দখলে রেখে মাছ শিকার করতে পারবে না। বাঁওড় সবার জন্য উন্মুক্ত। কেউ আইন অমান্য করে মাছ শিকার করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও জানান, অভিযান চালাতে গিয়ে দুই বার প্রভাবশালীদের আক্রমণের শিকার হয়েছেন। বাঁওড়টিকে সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা করে কারেন্ট জাল এবং গাছের ডাল নির্মূল করতে পারলে মাছের উৎপাদন বাড়বে।

এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা।