বেদনাময় সেই রক্তাক্ত দিনটির কথা মনে করিয়ে দেয়-শহীদদের স্মরণে নির্মিত বড়ইতলা স্মৃতিসৌধ। সেদিন কিশোরগঞ্জের যশোদল ইউনিয়নের বড়ইতলা গ্রামে এ গণহত্যা চালায় পাকিস্তানি বাহিনী। আর এ গণহত্যায় মদত জোগায় এদেশীয় স্থানীয় রাজকাররা। স্বজনহারা শহীদ পরিবারের লোকজন এখনও নীরবে চোখের জল ফেলে।
জানা যায়, পাকসেনাদের একটি ট্রেন ১৩ অক্টোবর সকালে বড়ইতলা গ্রামের কাছে এসে থামে। তারপর তারা ট্রেন থেকে নেমে স্থানীয় রাজাকারদের নিয়ে পাকিস্তানের পক্ষে একটি সমাবেশ করার চেষ্টা চালায়। এ সময় এক পাকসেনা দলছুট হয়ে পড়ায় রাজাকাররা গুজব রটিয়ে দেয় তাকে হত্যা করা হয়েছে। এরপরই হিংস্র পশুর মতো নিরীহ গ্রামবাসীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানি বাহিনী। বড়ইতলা, চিকনিরচর ও দামপাড়াসহ আশপাশের এলাকার পাঁচ শতাধিক লোককে ধরে এনে কিশোরগঞ্জ-ভৈরব রেললাইনের পাশে জড়ো করে তারা। এক পর্যায়ে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে, রাইফেলের বাঁট দিয়ে পিটিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয় ৩৬৫ জনকে। এ সময় আহত হয় দেড় শতাধিক ব্যক্তি।
বর্তমান স্মৃতিসৌধটি যে জমির ওপর দাঁড়িয়ে আছে সেটি দান করেছিলেন বড়ইতলার মো. মর্ত্তুজ আলী। তিনি অভিযোগ করে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ১৩ অক্টোবর ছাড়া স্মৃতিসৌধটির খোঁজ কেউ রাখে না। তবে দীর্ঘদিনের জরাজীর্ণতা কেটেছে। বর্তমান উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে স্মৃতিসৌধটির রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যা এলাকাবাসীর বহুদিনের দাবির প্রতিফলন। আশা করবো ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে এ স্মৃতিসৌধ ও বড়ইতলা গণহত্যার ইতিহাস তুলে ধরতে অবিলম্বে একটি পাঠাগারও নির্মাণ করা হবে।
কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুল কাদির মিয়া বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, স্মৃতিসৌধটির সংস্কার কাজ করা হয়েছে। কিছু সংস্কার এখনও চলছে। ১৯৭১ সালে এ গ্রামে ঘটে যাওয়া নৃশংসতার ইতিহাস সকলের জানা উচিত। ইতিহাসের এমন অনেক ঘটনা নতুন প্রজন্ম জানে না। আর সেই লক্ষ্যে স্মৃতিসৌধে একটি পাঠাগার স্থাপনের পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে। আশা করছি দ্রুত এর কাজ সম্পন্ন হবে।
এলাকাবাসী নিহতদের শহীদের মর্যাদা, স্থানীয় রাজকারদের বিচার ও দিনটি সরকারিভাবে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের দাবি জানিয়েছে।