বদলে গেছে বিএসএমএমসি, কী আছে এই মেডিক্যাল কলেজে?

১৯৯২ সালে একটি তিনতলা ভবন, ছাত্রাবাস ও এমবিবিএস কোর্সের ৫০ শিক্ষার্থী নিয়ে শুরু হয়েছিল ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ। মুজিব শতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে প্রতিষ্ঠানটির নাম রাখা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ, সংক্ষেপে বিএসএমএমসি। এরপরই শুরু হয় আসল পরিবর্তন। নামের সঙ্গে বদলে যেতে থাকে কলেজের ভেতরের চিত্রও। দুই বছরের মধ্যে বিএসএমএমসি দেশসেরা মেডিক্যাল কলেজের তালিকায় থাকবে, এমনটিই জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

২০১৭ সালে কলেজটি শহরের পশ্চিম খাবাসপুরে ১৬ দশমিক ৭৫ একরজুড়ে নতুন ক্যাম্পাসে স্থানান্তরিত হয়। যেখানে রয়েছে একটি সাউন্ডপ্রুফ সিস্টেম সংবলিত সুবিশাল অডিটোরিয়াম, ৬টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত লেকচার গ্যালারি ও ছয়তলা একাডেমিক ভবন।

IMG_7279আছে একটি সুসজ্জিত ও পূর্ণাঙ্গ ডিসেকশন হল, লাইব্রেরি, কলেজ ক্যান্টিন এবং প্রতিটি বিষয়ের জন্য আলাদা টিউটোরিয়াল রুম। রয়েছে পুরুষ এবং নারীদের ডরমিটরি, ইন্টার্ন হোস্টেল, অধ্যক্ষ ও পরিচালকদের আলাদা বাসভবন, চিকিৎসক ও স্টাফদের কোয়ার্টার এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মসজিদ।

ছাত্রদের জন্য একটি ও ছাত্রীদের জন্য দুটি হোস্টেল আছে। ক্যাম্পাসজুড়ে আছে সিসিটিভি ক্যামেরা ও সারভেইলেন্স টিম।

কলেজটিতে রয়েছে মানবসেবার জন্য সন্ধানী ক্লাব ও মেডিসিন ক্লাব। মননশীলতার বিকাশে প্রতীতী ক্লাব। এছাড়াও রয়েছে ফিল্ম অ্যান্ড মিউজিক সোসাইটি, ফটোগ্রাফি অ্যান্ড ডিবেটিং ক্লাব ও রোটার‌্যাক্ট ক্লাব।

২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে এখানে আসন সংখ্যা ছিল ১৩৩টি। ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে বেড়ে ১৬০টি হয়েছে। এখানে থাকা ৩২টি বিভাগ হলো, অ্যানাটমি, ফিজিওলজি, বায়োকেমিস্ট্রি, ফরেনসিক মেডিসিন, কমিউনিটি মেডিসিন, প্যাথলজি, মাইক্রোবায়োলজি, ফার্মাকোলজি, মেডিসিন, সার্জারি, গাইনি ও অবস, শিশু, নিউরোলজি, নিওনেটোলজি, চর্ম ও যৌনরোগ, মানসিক রোগ, ফিজিক্যাল মেডিসিন, রক্ত পরিসঞ্চালন, বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি, রেডিওথেরাপি, অর্থো সার্জারি, কার্ডিওলজি, রেডিওলজি, ইউরোলজি, গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি, নেফ্রোলজি, চক্ষু, নাক কান ও গলা, শিশু সার্জারি, অ্যানাসথেসিওলজি, দন্ত ও হেপাটোলজি। বিভাগগুলোতে কর্মরত রয়েছেন ১২২ জন শিক্ষক।

১৯৯২ সালের ২২ মার্চ কলেজটির প্রথম অধ্যক্ষ হন প্রয়াত অধ্যাপক ডা. মো. এনায়েত হোসেন। সর্বশেষ গত বছরের ৩০ জুলাই সপ্তম অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব নেন অধ্যাপক ডা. মোস্তাফিজুর রহমান। কানাডার রায়ারসন ইউনিভার্সিটি থেকে হেলথ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন-হেলথ সার্ভিসেস ম্যানেজমেন্ট এবং প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট ফর টেকনিক্যাল প্রফেশনাল বিষয়ে ডিগ্রি নিয়েছেন তিনি। দেশে এ বিষয়ে তিনিই একমাত্র গ্রাজুয়েট।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজের প্রবেশদ্বার অধ্যক্ষ ডা. মোস্তাফিজুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর নীতি ছিল চিকিৎসা খাতকে অলাভজনক হিসেবে গড়ে তোলা। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে যেমনটি করা হয়। বঙ্গবন্ধুর সেই অলাভজনক স্বাস্থ্য খাত গড়ার ভিত্তি হিসেবে এই কলেজের মানোন্নয়নে কাজ করছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে এখানে অবকাঠামোগত দিকে বেশ উন্নতি হয়েছে। দুই বছরের মধ্যে আশা করছি বিএসএমএমসি সেরাদের তালিকায় থাকবে।’

তিনি বলেন, এখানে বিএসএমএমইউ এবং সেভ দ্য চিলড্রেনের সহায়তায় শিশু বিভাগে আন্তর্জাতিক মানের একটি ট্রেনিং সেন্টার স্থাপন করা হচ্ছে। যেখানে বিএসএমএমইউ’র মতোই অবকাঠামো থাকবে। এছাড়া ফিনল্যান্ড ও কানাডার দুজন চিকিৎসকের সহায়তায় একটি আন্তর্জাতিক মানের গবেষণা কেন্দ্র হচ্ছে। এজন্য একটি রিসার্চ সেল গঠন করা হয়েছে। যেখানে আইসিডিডিআরবি থেকে দুজন কনসালটেন্ট নিয়োগ দেওয়া হবে।

মোস্তাফিজুর রহমান আরও জানান, হৃদরোগীদের জন্য ক্যাথল্যাব চালু করা হচ্ছে। এনজিওগ্রাম ও হার্টে রিং পরানোর সুবিধা থাকবে। ক্যান্সার চিকিৎসায় ব্যবহৃত অচল পড়ে থাকা দামি যন্ত্রপাতি সচল করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি কবিরুল ইসলাম সিদ্দিকী বলেন, দক্ষিণবঙ্গের দ্বারপ্রান্ত ফরিদপুরের এই মেডিকেল কলেজের সঙ্গে জড়িত রয়েছে এখানকার সাধারণ মানুষের সুচিকিৎসা। এই কলেজের উন্নতির পাশাপাশি ৭৫০ শয্যার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুচিকিৎসাও জড়িত।