ঘুড়ি বিক্রি করে সংসারের হাল ধরেছেন দিনমজুর ইলিয়াস

দেশে চলমান কঠোর লকডাউনে বন্ধ হয়ে গেছে অনেকের আয়-রোজগারের পথ। সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। করোনা দুর্যোগের এই সময়ে অনেকেই বাধ্য হয়ে খুঁজে নিয়েছেন বিকল্প কর্মসংস্থানের পথ। ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার সদর ইউনিয়নের জাটিগ্রামের বাসিন্দা দিনমজুর ইলিয়াস শেখ (৬০) তাদেরই একজন।

দিনমজুরের কাজ না পেয়ে বাধ্য হয়ে তিনি ঘুড়ি বিক্রি করছেন। তা দিয়েই চলছে তার সংসার। গতবছর দেশে যখন করোনাভাইরাস হানা দেয় তখন থেকেই তিনি এই ঘুড়ি বিক্রি শুরু করেন। এরপর করোনা পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসলে তখন তিনি আবার দিনমজুরের কাজে ফিরে যান। এবছর নতুন করে করোনার ঢেউ শুরু হলে তিনি আবার শুরু করেন ঘুড়ি বিক্রি।

লকডাউনে অবসর সময় কাটাতে বিভিন্ন স্থানে শুরু হয়েছে ঘুড়ি ওড়ানোর উৎসব। আর এই ঘুড়ি উৎসবকে কাজে লাগিয়ে ফরিদপুর জেলার ৯টি উপজেলার বিভিন্ন গ্রামেগঞ্জে ঘুড়ি বিক্রি করে বিকল্প কর্মসংস্থানের পথ তৈরি করেছেন অনেকে।

ইলিয়াস শেখ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আগে কাম-কাজ কইরা সংসার চালাইতাম। কিন্তু কিছুদিন আগে লকডাউন দেওয়ার পরে বেকার হইয়ে পড়ি। তহন দেহি, অনেকেই শখ কইরা ঘুন্নি (ঘুড়ি) উড়াইয়া সময় কাটাচ্ছে। তাই আমিও শখ কইরা একটা ঘুন্নি বানাইয়া কয়েকদিন উড়াই। এইডা দেইখ্যা গ্রামের একজন তার বাচ্চার লাইগ্যা একটা ঘুন্নি বানাই দিতে বলে। পরে তারে একটি ঘুন্নি (ঘুড়ি) বানাই দেই। পরে সে খরচের কিছু টাকা দেয়। এর পরেই ঘুন্নির ব্যবসার চিন্তাডা মাথায় আইছে।’

জানা গেছে, শৈশবে ঘুড়ি বানানোর কলা-কৌশল রপ্ত করেছিলেন ইলিয়াস মোল্লা। গত বছর করোনায় ছোট-বড় মিলিয়ে অন্তত ৬০০টি ঘুড়ি বানিয়ে বিক্রি করেছেন তিনি। কিন্তু এবছর ঘুড়ি বিক্রির চাহিদা একটু কম। তারপরেও গত কয়েক সপ্তাহে ১০০টি ঘুড়ি বিক্রি করেছে সে। ঘুড়ি ব্যবসায় ক্রেতাদের ব্যাপক চাহিদা থাকার কারণে ইতোমধ্যে জাটিগ্রাম বাজারে একটি দোকানঘরও ভাড়া করেছেন তিনি। বর্তমান তিনি দোকানে বসে ঘুড়ি তৈরি ও বিক্রয় করেন। ঘুড়িগুলো তৈরি করে দোকানেই সাজিয়ে রাখেন। চার-পাঁচ রকমের ঘুড়ি বানাতে পারেন তিনি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চলছে পতেঙ্গা ঘুড়ি, চিল ঘুড়ি ও বক্স ঘুড়ি। আকার ভেদে একেকটি ঘুড়ির দাম পড়ে তিনশো থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত। এছাড়া অনেকে অর্ডার দিয়ে বড় সাইজের ঘুড়িও বানিয়ে নিচ্ছেন। সেগুলোর দাম আরেকটু বেশি।

ঘুড়ি বানাতে ইলিয়াস মোল্লা পলিথিন পেপার ব্যবহার করেন। এতে ঘুড়ি টেকসই হয়। বৃষ্টিতে ভিজে নষ্ট হয় না, বাতাসেও ছিঁড়ে না। পলিথিন ছাড়াও বাঁশ এবং সুতা বাবদ অল্পকিছু খরচ পড়ে। সামান্য এই খরচ বাদে পুরোটাই লাভ হিসেবে থাকে তার।

শুধু আলফাডাঙ্গার জাটিগ্রামের বাসিন্দারাই নয়, দূর-দূরান্ত থেকেও অনেক সৌখিন লোক এসে ইলিয়াসের কাছ থেকে ঘুড়ি সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছেন।

উপজেলার বানা এলাকার বাসিন্দা আলমগীর হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ইলিয়াস মোল্লা একজন ভালো ঘুড়ি তৈরির কারিগর। তিনি বিভিন্ন ধরনের ঘুড়ি তৈরি করতে পারেন। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় তার ঘুড়ির নাম ডাক আছে।

আলফাডাঙ্গা উপজেলার সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম আহাদুল হাসান জানান, শুধু ইলিয়াস মোল্লা না, তার মতো আরও অনেকেই ঘুড়ি বানিয়ে বিক্রি করছেন। করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউন ঘোষণার পর মানুষ যখন হঠাৎ গৃহবন্দি হয়ে পড়ে ঠিক তখনই আলফাডাঙ্গা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে ব্যাপকহারে ঘুড়ি ওড়ানোর উৎসব শুরু হয়। লকডাউন প্রত্যাহারের পরও তা অব্যাহত থাকে।

এ বিষয়ে আলফাডাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান জাহিদুল হাসান জাহিদ বলেন, তিনি একজন ভালো ঘুড়ির কারিগর। তাকে সাধ্য অনুযায়ী সাহায্য সহযোগিতা করা হবে বলেও তিনি আশ্বাস দেন।