ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় দুই পুলিশ সদস্যকে ঘুষি মেরে হাতকড়াসহ পালানো মো. বরকতকে পাঁচ দিনেও গ্রেফতার হয়নি। এ ঘটনায় ৪৪ জনের নাম উল্লেখ করে ও ১২০ জন অজ্ঞাত ব্যক্তির নামে পুলিশের দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার আতংকে একটি গ্রাম পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। থানা পুলিশের নিয়মিত অভিযানে এলাকাজুড়ে বিরাজ করছে থমথমে পরিবেশ।
সোমবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আলফাডাঙ্গা উপজেলার ৬ নম্বর পাঁচুড়িয়া ইউনিয়নের ধুলজুড়ি গ্রামের মানুষ গ্রেফতার এড়াতে বসতভিটা ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। গ্রেফতারের ভয়ে দিনের বেলায় হাতেগোনা কয়েকজন পুরুষ মানুষকে দেখা গেলেও রাতে সে সংখ্যা একেবারে শূন্যের কোটায় নেমে আসে। বর্তমানে গ্রামের বেশিরভাগ বাড়িতে নারী ও শিশুরাই শুধু অবস্থান করছে। বাজারেও অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। স্থানীয়দের ভাষ্য, মামলায় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ ৪৪ জনের নাম উল্লেখ করে শতাধিক অজ্ঞাত আসামি করার কারণেই গ্রামে রীতিমতো সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
তাদের দাবি তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেফতার করা হোক। নিরীহ ও নিরপরাধ মানুষ যাতে হয়রানির শিকার না হন।
ধুলজুড়ি গ্রামের শিলা বেগম জানান, আমার স্বামী পুলিশ আহতের খবর জানেও না। কিন্তু তাকে পুলিশ এই মামলার আসামি করেছে। খোরশেদ শেখ নামক এক ব্যক্তি জানান, সাধারণ মানুষও ভয়ে আছেন। পুরুষ মানুষ এলাকা ছেড়ে পালিয়ে আছেন। গত শনিবার রাতে শহীদ শেখের বাড়িতে আগুন লাগে। কিন্তু গ্রামে পুরুষ মানুষ না থাকায় আগুন নেভাতে অনেক কষ্ট হয়েছে।
ওই গ্রামের সোনিয়া বেগম জানান, সব সময় ভয়ে রয়েছি। পুলিশের ভয়ে বাড়িতে কোনও পুরুষ মানুষ নেই।
সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা এমএম জালাল উদ্দিন আহমেদ পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, পুলিশ কারো প্ররোচনায় কোনও ওয়ারেন্ট ছাড়া আমার বাড়িতে সিভিল পোশাকে আমার ভাতিজার হাতে হাতকড়া পরানোসহ আমাকে গ্রেফতার করে সমাজের কাছে অপদস্ত করেছে।
এ বিষয়ে পাঁচুড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান এস এম মিজানুর রহমান জানান, আমি ঘটনার আগের থেকেই কয়েকদিন ধরে এলাকায় ছিলাম না। ব্যবসায়িক কাজে ঢাকায় ছিলাম। হাতকড়া নিয়ে পালানো যুবক আমার সমর্থকও নয়। এ ঘটনার সঙ্গে আমার কোনও সম্পৃক্ততা নেই। কিন্তু আমি ঢাকায় অবস্থান করেও পুলিশের করা মামলায় মিথ্যা আসামি হয়েছি। যা খুবই দুঃখজনক।
এসব অভিযোগ বিষয়ে আলফাডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ ওয়াহিদুজ্জান বলেন, ওরা আমার দুই পুলিশ সদস্যকে মারধর করেছে, বিধায় মামলা করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ওই এলাকায় দীর্ঘদিন গোলমাল লেগেই আছে। ওদের শান্ত করার জন্য আমাকে বাধ্য হয়ে এ পথ বেছে নিতে হয়েছে। তবে কাউকে বিনা দোষে হয়রানি করা হবে না বলে আশ্বস্ত করেন তিনি।
প্রসঙ্গত, ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় দুই পুলিশ সদস্যকে ঘুষি মেরে হাতকড়াসহ পালিয়ে যায় মো. বরকত নামের এক যুবক। আলফাডাঙ্গা উপজেলার পাঁচুড়িয়া ইউনিয়নের বেড়ির হাটি গ্রামে শুক্রবার (৪ জুন) সন্ধ্যা সাতটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আহত দুই পুলিশ সদস্য হলেন উপপরিদর্শক মঞ্জুর হোসেন ও মো. জামালউদ্দিন। এ ঘটনার পরেরদিন শনিবার (৫ জুন) সকালে আলফাডাঙ্গা থানার এসআই প্রশান্ত কুমার বাদী হয়ে উপজেলার পাঁচুড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান এস এম মিজানুর রহমানসহ ৪৪ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত ১০০-১২০ জনকে আসামি করে এ মামলাটি দায়ের করেন। মামলা নম্বর- ০৩। এ ঘটনায় ৮ জনকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠিয়েছে থানা পুলিশ।
তবে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, ঘটনার দিন শুক্রবার সন্ধ্যায় আলফাডাঙ্গা থানার এসআই মঞ্জুর হোসেন ও এএসআই জামাল উদ্দিন বেড়িরহাট বাজারে গিয়ে ধুলজুড়ি গ্রামের বরকত নামে এক যুবকের এক হাতে হাতকড়া পরান। তখন বরকত আরেক হাত দিয়ে এসআই মঞ্জুরকে ঘুষি দেন। ওই সময় এএসআই জামালউদ্দিন ওই যুবককে ধরতে এগিয়ে গেলে তাকেও তখন হাতকড়া পরা হাত দিয়ে আঘাত করে ওই যুবক পালিয়ে যান। এছাড়া গ্রামে ওইদিন কোনও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি।