লকডাউনে ভালো থাকতে ডাবল ভাড়া নিচ্ছেন পরিবহন শ্রমিকরা!

গাজীপুর থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে চলাচলকারী যানবাহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় এবং সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি না মানার অভিযোগ উঠেছে। লকডাউনের আগে বাড়তি আয় করতে যেন মরিয়া হয়ে উঠেছেন গণপরিবহনের কর্মীরা। যাত্রীরা বলছেন- লকডাউনের ঘোষণায় সিএনজি ও বাসচালকেরা ৫০ টাকার ভাড়া ১০০ টাকা এবং ১০০ টাকার ভাড়া ২০০ টাকা নিচ্ছেন। দূরত্বভেদে প্রতি স্টপেজেই দ্বিগুণ ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা।

জানা যায়, ঈদের আগে সড়কে গণপরিবহনের সংখ্যা ছিল কম। কিন্তু ঈদের পরদিন এ চিত্র পাল্টে গেছে। এখন সড়কে পণ্যবাহী পরিবহনের সংখ্যা কম। সড়ক-মহাসড়কের বেশিরভাগ এলাকা ফাঁকা থাকলেও বাসস্টপেজ, আশপাশের এলাকা এবং সংযোগ সড়ক স্থানগুলোতে যানজট লক্ষ্য করা গেছে। যাত্রীরা সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না।

গাজীপুরের মনিপুর (তালতলা) এলাকার ওয়ান কম্পোজিট কারখানার অপারেটর সোহাগ মিয়ার সঙ্গে কথা হয় বাঘের বাজার বাসস্ট্যান্ডে। তিনি বলেন, ঈদের আগে সড়কে গণপরিবহন কম থাকায় বাড়িতে যাইনি। বৃহস্পতিবার (২২ জুলাই) ঈদের পরদিন স্ত্রীকে নিয়ে নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার বেখৈরহাটি গ্রামে রওনা দিয়েছি। আজ সড়কে গণপরিবহন থাকলেও অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছেন চালকেরা। আগামীকাল থেকে লকডাউন। তাই, আজ বাড়িতে না গিয়ে কোনও উপায় নেই।

কোনাবাড়ি এলাকার গোবিন্দ ফ্যাশন কারখানার রক্ষণাবেক্ষণ কর্মকতা সাগর হোসেন শ্রীপুর উপজেলার লোহাগাছ গ্রাম থেকে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে গাজীপুর মহানগরের চান্দনা এলাকায় বড় ভাইয়ের বাসায় বেড়াতে যাচ্ছেন। যে স্টপেজ থেকে যেখানেই যাচ্ছেন পরিবহন ভাড়া দ্বিগুণ দিতে হচ্ছে।

শ্রীপুরের বরমী গ্রামের গৃহিণী কলি বেগম ছোট ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে গাজীপুর সদর উপজেলার মেম্বারবাড়ী এলাকায় এক স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, আগের তুলনায় রাস্তা ফাঁকা থাকলেও সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালকেরা অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছেন।

তাকওয়া পরিবহনের বাসচালক সাইদুল ইসলাম বলেন, ঈদের আগে লকডাউন ছিল। আগামীকাল থেকে আবার লকডাউন শুরু। পরিবার নিয়ে ভালোভাবে ঈদ করতে পারিনি। তাই অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া ছাড়া উপায় নেই। লকডাউনের দিনগুলো কোনোরকম খেয়ে-পরে যেন চলতে পারি, তাই উপার্জন করতে হবে। অন্যথায় লকডাউনে জীবিকা নির্বাহ করা কষ্টদায়ক হয়।

সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক তোফাজ্জল হোসেন বলেন, মহাসড়কে অটোরিকশা চালানো নিষেধ। ঘরে বসে থাকার উপায় নেই। লকডাউনে পরিবার পরিজন নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করার জন্য আজকেই যা পারি উপার্জন করার চেষ্টা করছি।

ময়নসিংহের ইসলাম পরিবহনের বাসচালক জাকির হোসেন বলেন, লকডাউনের কারণে ঈদের পরদিনও যাত্রী ভালো পাচ্ছি। লকডাউনের দিনগুলো যেন একটু ভালো থাকতে পারি সেজন্য কিছু বাড়তি উপার্জনের চেষ্টা করছি। 

মাওনা চৌরাস্তা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামাল হোসেন জানান, স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য পুলিশ মাইকিং ও প্রচারপত্র বিতরণ করছে। অতিরিক্ত ভাড়ার বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।