১৭ বছর প্রিয় নেত্রীর স্নেহবঞ্চিত ভৈরবের নেতাকর্মীরা

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী জনসভায় গ্রেনেড হামলায় গুরুতর আহত হন কিশোরগঞ্জের ভৈরবের কৃতী সন্তান আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক, নারীনেত্রী ও মুক্তিযোদ্ধা আইভি রহমান। এরপর ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) তিন দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে ২৪ আগস্ট শেষ নিশ্বাস ত‌্যাগ করেন তিনি।

প্রয়াণ দিবসে প্রিয় নেত্রীকে স্মরণ করছে ভৈরববাসী। আইভি রহমান আওয়ামী লীগের জাতীয় পর্যায়ের নেতা হয়েও ভৈরবের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের খোঁজখবর রাখতেন নিয়মিত। ভৈরবের নেতাকর্মীদের কাছে এক ভরসার নাম ছিলেন আইভি রহমান। তাদের সবার প্রিয় এই নেত্রী একবাক‌্যে দলমত নির্বিশেষে ‘আপা’ হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা আপা ডাকলেও তিনি তাদের আগলে রাখতেন মাতৃস্নেহে।

ভৈরবের নেতাকর্মীরা ১৭ বছর ধরে মাতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত। তারা মমতাময়ী নেত্রী আইভি রহমানকে এখনও এক মুহূর্তের জন‌্য ভুলতে পারেন না। ভৈরববাসীর জন‌্য আইভি রহমানের বাড়ির দরজা দিন-রাত সব সময়ের জন‌্য খোলা থাকতো। আজ প্রিয় নেত্রীর ১৭তম প্রয়াণ দিবসে শ‌্রদ্ধার সঙ্গে তাকে স্মরণের পাশাপাশি ২১ আগস্টের হামলা এবং এর পরিকল্পনাকারীদের বিচারের আশায় পথ চেয়ে আছেন তারা।

ভৈরব শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতিক আহমেদ সৌরভ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আপা ছিলেন কর্মীবান্ধব একজন নেত্রী। তিনি কর্মীদের সঙ্গে সহজভাবে মিশতেন। আমি তখন ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। বিভিন্ন দুর্দিন-দুঃসময়ে আন্দোলন-সংগ্রামে যেকোনও কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলার জন‌্য আপা সাহস জোগাতেন। নেতাকর্মীদেরকে নিজের সন্তানের মতো ভালোবাসতেন, আগলে রাখতেন। যেকোনও সংকটে ভৈরবে চলে আসতেন এবং মানুষের পাশে দাঁড়াতেন। আইভি রহমান ছিলেন ভৈরবের মেয়ে, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী হিসেবে ভৈরবের বউ। তাই ভৈরবে দলমত নির্বিশেষে আপার একটা গ্রহণযোগ‌্যতা ছিল। রাষ্ট্রপতির স্ত্রী হয়েও তিনি নিজ আলোয় আলোকিত ছিলেন।’

প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের চাচাতো ভাই ও আইভি রহমানের দেবর সাখাওয়াত মোল্লা বলেন, ‘আইভি ভাবি রাজনীতিতে যেমন সবার প্রিয়ভাজন ছিলেন তেমনি পারিবারিক জীবনেও একজন সফল মানুষ ছিলেন। পরিবার-পরিজন আত্মীয়-স্বজন সবার খোঁজখবর রাখতেন। ভাবির মৃত্যু রাজনীতিতে বা ভৈরববাসীর জন‌্য যতটা ক্ষতি হয়েছে, আমাদের পরিবারেও তার শূন্যতা পূরণ হওয়ার নয়। তিনি সব আত্মীয়-স্বজনের হাড়ির খবর রাখতেন। আমাদের সবার ভালোবাসার আশ‌্রয় ছিলেন ভাবি। আমরা এই হত‌্যাকাণ্ডের বিচার চাই।’

ভৈরব শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি বাকী বিল্লাহ বলেন, ‘দ্রুত এ হত‌্যাকাণ্ডের বিচার করতে করতে হবে। আমাদের দাবি, আইভি রহমানের নামে বাংলাদেশের জাতীয় কোনও বড় স্থাপনার নামকরণ করা হোক। যেন মানুষ এই ত‌্যাগী নেত্রীকে সব সময় মনে রাখে।’

ভৈরব উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমরা আইভি আপার মমতা বঞ্চিত হয়েছি। আপা আমাদের সব কথা শুনতেন। সমাধানের চেষ্টা করতেন। ২১ আগস্টের ঘটনার সাত দিন আগেও তিনি ভৈরবে এসেছিলেন। বন‌্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেছিলেন। আমাদের কথা দিয়ে গিয়েছিলেন এক সপ্তাহ পর ঢাকা থেকে প্রচুর ত্রাণ নিয়ে আবার ফিরবেন। কিন্তু তিনি আর ফিরলেন না ফিরলো তার নিথর দেহ। আমরা দ্রুত এ হত‌্যাকাণ্ডের বিচার চাই।’

আইভি রহমানের ১৭তম প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে ভৈরব উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দিনব‌্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।সকালে দলীয় কার্যালয়ে কালো পতাকা ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। এরপর ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে আইভি রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ‌্রদ্ধা নিবেদন  করবেন নেতাকর্মীরা। তাছাড়াও দুপুরে কেবি সরকারি উচ্চ বিদ‌্যালয়ে স্মরণসভা এবং পাঁচ হাজার দরিদ্র মানুষের জন‌্য খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।