পদ্মায় বিলীন চরাঞ্চলবাসীর চিকিৎসার একমাত্র ভরসা

মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার আজিমনগর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে গত বুধবারও চিকিৎসা নিয়েছেন রোগীরা। শনিবার (২৮ আগস্ট) রাতে সেই স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, নদী ভাঙনে বিলীন হওয়ার আশঙ্কার বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে বেশ কয়েকবার জানানো হলেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এর আগে পদক্ষেপ না নেওয়ায় পাশের উপজেলার সুতালড়ী রামচন্দ্রপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নদী ভাঙনরোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি জানান তারা।

এদিকে ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে আজিমনগর ইউনিয়নের চরাঞ্চলের একমাত্র এমপিওভুক্ত আজিমনগর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়, ৫৭নং হারুকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাতিঘাটা আশ্রয়ণ প্রকল্প, ইব্রাহিমপুর জামে মসজিদ ও মাদ্রাসা। ভাঙনরোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া না হলে এসব স্থাপনা পদ্মায় বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

জেলা পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, মা ও শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে আজিমনগর ইউনিয়নের চরাঞ্চলে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয় স্বাস্থ্য অধিদফতর। ২০১২-১৩ অর্থবছরে হাতিঘাটা গ্রামে কেন্দ্রটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। কাজ শেষ হয় ২০১৩-১৪ অর্থবছরে। ৮১ লাখ টাকা ব্যয়ে এটি নির্মাণ করা হয়।

পদ্মায় বিলীন স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ফের ভোগান্তির শঙ্কা চরাঞ্চলবাসীর

স্থানীয়রা জানান, স্বাস্থ্যসেবা বিশেষ করে প্রসূতিসেবায় চরাঞ্চলের বাসিন্দাদের প্রতিনিয়ত ভোগান্তি পোহাতে হতো। নৌকায় ৮-১০ কিলোমিটার পদ্মা পাড়ি দিয়ে ঢাকার নবাবগঞ্জ ও হরিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কিংবা কোনও ক্লিনিকে সেবা নিতে হতো তাদের। হাসপাতালে নেওয়ার পথে রোগীর মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি হওয়ায় দীর্ঘদিনের এই সমস্যা অনেকটাই সমাধান হয়। কিন্তু পদ্মায় বিলীন হওয়ায় চরবাসীদের আবার সেই সমস্যায় পড়তে হবে।

আজিমনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, গত বছর নদী থেকে প্রায় ১৫০ গজ দূরে ছিল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিত জানানো হয়। সম্প্রতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকেও (ইউএনও) লিখিত জানানো হয়েছে। তবে স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি রক্ষায় কোনও পদক্ষেপ নেয়নি কর্তৃপক্ষ।

উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. কুতুব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। দ্রুত অস্থায়ীভাবে কোথাও চিকিৎসাসেবার ব্যবস্থার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।

ইউএনও সাইফুল ইসলাম বলেন, স্বাস্থ্য কেন্দ্রেটির নদী ভাঙন থেকে রক্ষায় জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছিল। 

এদিকে স্বাস্থ্য কেন্দ্র বিলীনের খবর জানেন না জেলা পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. গোলাম নবী। তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে গেছে? এটা রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানিয়েছিলাম।’

জেলা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাঈন উদ্দিন বলেন, বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে নদী ভাঙনরোধে ব্যবস্থা নিতে হলে বিপুল অর্থের প্রয়োজন। তাছাড়া তীব্র স্রোতের কারণে কাজও করা যায় না। এ ছাড়া ৬০ লাখ টাকা খরচ করেও ৫০ লাখ টাকার স্থাপনা রক্ষা করা যায়নি। ভবিষ্যতে চরাঞ্চলে স্থানান্তরযোগ্য স্থাপনা নির্মাণে পরামর্শ দেন তিনি।