ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা-বোয়ালমারী উপজেলার মধ্যে দিয়ে বয়ে চলা বারাংকুলা প্রাইমারি ও হাই স্কুল সংলগ্ন বারাশিয়া নদীতে দুই বছরেও একটি সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হয়নি। দুই উপজেলার জনসাধারণ ও স্কুলের শিক্ষার্থীদের চলাচলের সুবিধার্থে বরাদ্দ সাপেক্ষে ব্রিজ নির্মাণের প্রাথমিক কাজ করা হয়েছে। নির্ধারিত মেয়াদের পরও কাজ শেষ হয়নি। নদীর দুই পাড়ে ৩০ ভাগ কাজ করার পর সেতুটি নির্মাণ বন্ধ রয়েছে। এতে মানুষ চরম দুর্ভোগ পোহালেও এ নিয়ে কারও কোনও উদ্যোগ নেই। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) জানিয়েছে, নতুন করে ঠিকাদার নিয়োগ করে সেতুর কাজ করা হবে।
দীর্ঘদিন ধরে এই সেতুর নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় আলফাডাঙ্গা ও বোয়ালমারী উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের প্রায় ২০টি গ্রামের বসবাসরত মানুষসহ স্কুলগামী ছাত্র-ছাত্রীদের বারাশিয়া নদী পার হতে চরম দুর্ভোগে পড়ছেন। তবে শুষ্ক মৌসুমে বাঁশের সাঁকো পার হয়ে অথবা পায়ে হেঁটে চলাচল করা গেলেও বর্ষা মৌসুমে নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ডিঙি নৌকা ভরসা হয়ে দাঁড়ায় এই জনপদের মানুষের। অথবা আট-দশ কিলোমিটার পথ ঘুরে চলতে হয়।
আলফাডাঙ্গা উপজেলা এলজিইডির কার্যালয় সূত্র জানায়, সেতুটির অভাবে দুই উপজেলাবাসীর যোগাযোগ ব্যবস্থা বিছিন্ন। তাই দুটি উপজেলার যোগাযোগে, জনদুর্ভোগ কমাতে এবং স্কুলের শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে নতুন একটি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সে অনুযায়ী আলফাডাঙ্গা উপজেলার বারাংকুলা প্রাইমারি স্কুল ও বারাংকুলা উচ্চ বিদ্যালয়ের কাছে ৬২৫০ মিটার এবং বারাশিয়া নদীর ওপর ৪০ মিটার পিসি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণকাজের উদ্বোধন করা হয় ২০১৯ সালের ২৮ জুলাই। সেতুটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ৩ কোটি ৯০ লক্ষ ২১ হাজার টাকা। যার কাজের বাস্তবায়নের দ্বায়িত্বে রয়েছে আলফাডাঙ্গা উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর।
বোয়ালমারীর শেখর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এখানে একটা সেতুর দাবি দীর্ঘদিনের। একপাশে শেখর ইউনিয়ন, যেখানে বড়গাঁ প্রাইমারি স্কুল, বড়গাঁ নতুন বাজার রয়েছে। এখানে সপ্তাহে দুই দিন হাট বসে। এলাকার বারাংকুলা, ভাটপাড়া, দিঘিরপাড় রাখালতলী, গঙ্গানন্দপুরসহ প্রায় ১০টি গ্রামের লোকজন এবং অপর পাশে আলফাডাঙ্গার বুড়াইচ ইউনিয়নের ফলিয়া, হিদাডাঙ্গা, শিয়ালদিসহ প্রায় ১০ গ্রামের লোকজন এখান দিয়ে চলাচল করে। দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ রয়েছে, কবে শেষ হবে এ কাজ তা কে জানে।’
আলফাডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক, স্থানীয় বিআরডিবির চেয়ারম্যান ও ওই এলাকার বাসিন্দা মো. আবুল কাশেম মণ্ডল বলেন, ‘এখানে দীর্ঘদিন ধরে এলাকাবাসীর একটি সেতুর দাবি ছিল। সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রহমানের সময়কালে এবং তার প্রচেষ্টায় সেতুটির নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়। সে অনুযায়ী কাজও শুরু হয়। কিন্তু দুই পাশে কিছু কাজ হওয়ার পর দীর্ঘদিন পড়ে রয়েছে। কাজ শুরুর পর দীর্ঘদিন এভাবে পড়ে থাকলেও কেউ কোনও উদ্যোগ গ্রহণ করছে না। কতদিন পড়ে থাকবে তাও জানা নেই।’
এ ব্যাপারে আলফাডাঙ্গা উপজেলা প্রকৌশলী মো. রাহাত ইসলাম বলেন, ‘এ কাজের ঠিকাদার জেলে থাকায় কাজটি শুরুর পরেও বন্ধ রয়েছে। একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সমন্বয়ে যে পর্যন্ত কাজ হয়েছে তার হিসাব করে নতুন করে টেন্ডারের মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ করতে হবে। তারপর পুনরায় কাজ শুরু হবে।’
এ বিষয়ে আলফাডাঙ্গা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম জাহিদুল হাসান জাহিদ বলেন, ‘যতদূর জানি এ কাজের ঠিকাদার বেশ কয়েকটি মামলার আসামি হয়ে জেলখানায় বন্দি। তাই কাজটি দীর্ঘদিন বন্ধ রয়েছে।’
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে বন্দি থাকায় এ বিষয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সংশ্লিষ্ট কাউকে পাওয়া যায়নি। তাই প্রতিষ্ঠানটির কারও বক্তব্য জানা যায়নি।