নকশি কাঁথা, শীতল পাটি, শতরঞ্জিতে শুরু লোক ও কারুশিল্প মেলা

মেলা

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে মাসব্যাপী লোক ও কারুশিল্প মেলা এবং লোকজ উৎসব। সোনারগাঁওয়ের বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনে (সোনারগাঁও জাদুঘর হিসেবে পরিচিত) উৎসবমুখর পরিবেশে মেলা শুরু হয়েছে। মেলা প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। উৎসব চলবে ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।

এবারের মেলার অন্যতম আকর্ষণ গ্রামীণ লোকজ সংস্কৃতির অন্যতম মাধ্যম নকশি কাঁথা প্রদর্শন। ‘বাংলাদেশের গৌরবগাঁথা আমাদের এই নকশি কাঁথা’ শিরোনামে প্রদর্শনীতে সোনারগাঁওসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ১২ জন নকশী কাঁথা শিল্পী অংশ নিচ্ছেন।

মেলার প্রথম দিনেই বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থী উপস্থিত ছিলেন। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রচুর লোকজন এসেছিলেন মেলায়।

সোনারগাঁও

মেলায় ১৭২টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। মেলায় বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ৪৮ কারুশিল্পী মেলায় অংশ নিচ্ছেন। তাদের জন্য ২৪টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ঝিনাইদহ ও মাগুরার শোলা শিল্প, রাজশাহীর শখের হাড়ি, চট্টগ্রামের পাখা, রংপুরের শতরঞ্জি, সোনারগাঁয়ের হাতি-ঘোড়া পুতুল ও কাঠের কারুশিল্প, নকশি কাঁথা, নকশি হাতপাখা, মুন্সিগঞ্জের শীতল পাটি, মানিকগঞ্জের তামা-কাঁসা ও পিতলের কারুশিল্প, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান জেলার ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর কারুপণ্য, কিশোরগঞ্জের টেরা কোটা শিল্প, সোনারগাঁওয়ের পাটের কারুশিল্প, নাটোরের শোলার মুখোশ শিল্প, মুন্সিগঞ্জের পট চিত্র, ঢাকার কাগজের হস্তশিল্প ইত্যাদি এ মেলায় স্থান পাচ্ছে।

এছাড়াও লোক কারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসবে বাউলগান, পালাগান, কবিগান, ভাওয়াইয়া ও ভাটিয়ালী গান, জারি-সারি ও হাছন রাজার গান, লালন গীতি, মাইজভান্ডারী গান, মুর্শিদী গান, আলকাপ গান, গাঁয়ে হলুদের গান, বান্দরবান, বিরিশিরি, কমলগঞ্জের-মণিপুরী ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শরিয়তী-মারফতি গান, ছড়া পাঠের আসর, পুঁথি পাঠ, গ্রামীণ খেলা, লাঠি খেলা, দোক খেলা, ঘুড়ি উড়ানো, লোকজ জীবন প্রদর্শনী, লোকজ গল্প বলা, পিঠা প্রদর্শনী ইত্যাদি থাকবে।

উদ্বোধন

বৃহস্পতিবার সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি সিমিন হোসেন রিমি আনুষ্ঠানিকভাবে মেলার উদ্বোধন করেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিমিন হোসেন রিমি বক্তব্যে দেশীয় সংস্কৃতির বিকাশের প্রতি জোর দেন এবং বাঙালিপনা মেলায় তুলে দেওয়ার আহ্বান করেন। সেই সঙ্গে দেশের সবগুলো তথা ৬৪ জেলার শিল্প সংস্কৃতি ঐতিহ্য এ মেলায় একই সঙ্গে একই স্থানে তুলে ধরার পরিকল্পনার কথা বলেন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁও) আসনের সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা বলেন, ‘সোনারগাঁও একটি ঐতিহ্যবাহী এলাকা। এখানে এ মেলা সেই ঐতিহ্যকে আরও ফুটিয়ে তুলে। কিন্তু কেন জানি এ মেলা আয়োজনে অনেককে আলাদা করে রাখার চেষ্টা করা হয়। সেজন্য আয়োজকদের মন মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে।’

জামদানি

এদিকে, মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসক কথা বলায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতারা মেলা আয়োজনে তাদের অবমূল্যায়নের অভিযোগ এনে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাদের অভিযোগ, অনেক আন্দোলন সংগ্রাম করে তারা ফাউন্ডেশনের পরিধি বৃদ্ধি করেছেন। তারপরও মেলায় স্থানীয়দের স্টল বরাদ্দসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ১০ জানুয়ারি জাতীয় পার্টির এমপি লিয়াকত হোসেন খোকার সর্থকরা মেলা আয়োজন নিয়ে ফাউন্ডেশনের দুইজন কর্মকর্তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

 

/এসটি/