দেড় বছর পর নৌকা নিয়ে বিদ্যালয়ে হাবিবা

‘দীর্ঘদিন বাড়িতে থেকে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। অপেক্ষায় ছিলাম কবে বিদ্যালয় খুলবে। আজ সেই দিন, বিদ্যালয় খুলেছে। তবে বন্যায় রাস্তা-ঘাট সব পানিতে ডুবেছে। তারপরও নৌকা বেয়ে ঝুঁকি নিয়েই বিদ্যালয়ে এসেছি। বিদ্যালয়ে পৌঁছা মাত্রই শিক্ষকরা আমাকে বরণ করে নেন।’ 

এভাবেই দীর্ঘদিন পর বিদ্যালয়ে ফেরার কথা জানাচ্ছিলো টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের সৈদামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী হাবিবা আক্তার।

হাবিবা আরও বলে, ‘দীর্ঘদিন পর বিদ্যালয় খুলেছে। বিদ্যালয়ে গিয়ে প্রিয় শিক্ষক ও বন্ধু-বান্ধবীদের সঙ্গে দেখা হলো। বাবা-মা আরও উৎসাহিত হয়ে আমাকে বিদ্যালয়ে পাঠিয়েছেন। আমি নিজেই দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে নৌকা বেয়ে বিদ্যালয়ে এসেছি। আমার সঙ্গে আরও দুই বান্ধবী নৌকায় এসেছে। তারাও আমাকে সহযোগিতা করেছে। বিদ্যালয়ে এসে বেশ আনন্দ পেয়েছি। আমার ক্লাস রোল-৩। এজন্য শিক্ষকরাও আমাকে অনেক আদর-স্নেহ করেন।’

নৌকা বেয়ে হাবিবা ও তার বান্ধবীরা স্কুলে পৌঁছায়পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী সেজুতি সরকার বলে, ‘বিদ্যালয়ে এসে আমি খুবই খুশি। দীর্ঘদিন পর শিক্ষক ও বন্ধু-বান্ধবীদের সঙ্গে দেখা হলো। আমিও নৌকা নিয়ে বিদ্যালয়ে এসেছি। বন্যার পানি থাকায় সব সড়ক ডুবে গেছে। এজন্য নৌকা ছাড়া আর বিকল্প উপায় নেই। বিদ্যালয়ে আসা মাত্রই শিক্ষকরা আমাদের বরণ করে নেন।’

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পারভীন সুলতানা খান বলেন, ‘প্রায় দেড় বছর পর বিদ্যালয় খুলেছে। আমরা এই দিনটির অপেক্ষায় ছিলাম। শিক্ষার্থীরা খুব আগ্রহ নিয়ে বিদ্যালয়ে এসেছে। আমরা তাদের বরণ করে নিয়েছি। বিদ্যালয়ে ক্লাস নিতে ও তাদের বরণ করতে আমাদের আগে থেকেই প্রস্তুতি ছিল। বিদ্যালয়ে আসার পর সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে শিক্ষার্থীদের নিয়ে করোনাভাইরাস ও ভেঙ্গু বিষয়ে আলোচনা করা হয়। শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে এসে খুবই আনন্দ পেয়েছে।’

নৌকা বেয়ে স্কুলে হাবিবা ও তার বান্ধবীরাতিনি আরও বলেন, ‘প্রথম দিন আমরা পঞ্চম ও তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিচ্ছি। প্রথমদিনে পঞ্চম শ্রেণিতে ৪১ জনের মধ্যে ২৮ জন ও তৃতীয় শ্রেণিতে ৪১ জনের মধ্যে ৩২ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল।’

বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘বিদ্যালয়ে পাঠদানের সব প্রস্তুতি আগে থেকেই নেওয়া হয়েছিল। সকালে শিক্ষার্থীদের বরণ করে নেওয়া হয়। এরপর সঠিক সময়ে ক্লাস শুরু হয়। আমরা করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সব ধরণের পদক্ষেপ নিয়েছি। বিদ্যালয়ে পানি নেই। তবে বিদ্যালয়ের চারদিকেই বন্যার পানিতে থৈ থৈ অবস্থা। এজন্য শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা নৌকা করে বিদ্যালয়ে এসেছে।’

স্কুলে হাবিবাউপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সদানন্দ পাল বলেন, ‘উপজেলায় ৭৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েই একযোগে পাঠদান শুরু হয়েছে। তবে একটি বিদ্যালয়ে পানি থাকার কারণে পাশের বাড়িতে পাঠদান সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া আর কোনও সমস্যা নেই। ’

প্রসঙ্গত, গত বছর ৮ মার্চ দেশে করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর ওই বছর ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়।